নিজস্ব প্রতিবেদক:
উত্তরের জনপদে মধ্য মাঘে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা না থাকলেও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। নগরের তুলনায় তিস্তার চর এলাকায় শীতের প্রকোপ আরও বেশি।
শীতে জবুথবু জনজীবনে আরও বেশি আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠাণ্ডাজনিত নানা উপসর্গ। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, রংপুর জেলায় গত এক মাসে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু-বৃদ্ধসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নগরবাসীরা কেউ বাড়ির বাইরে আসছেন না। তবে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুররা। নিতান্ত পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে তাদের। তীব্র শীতে কাজেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
উত্তরের জেলাগুলোতে সরকারি, বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ‘অপ্রতুল’ বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ। তবে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন, সরকারের ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে আসা শীতবস্ত্র পর্যাপ্ত রয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে এগিয়ে আসছেন।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজারহাটে, ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস
শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামে। হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শুরু হয়েছে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ। শুক্রবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে রাজারহাট কৃষি ও সিনপটিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।
এ বছর জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রংপুরে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলিসিয়াস।
রাজারহাটের কৃষি ও সিনপটিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে সেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় অর্ধেক কমে শুক্রবার সকাল ৯টায় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসছে হিমেল হাওয়া। এই হাওয়া আসার গতিবেগ বেড়ে যাওয়ায় আকাশে এখন মেঘ নেই। ভোরের দিকে একটু হালকা কুয়াশা পড়লেও সকাল হতে না হতেই রোদের দেখা মিলেছে। তারপরও ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে বেশি। আগামী আরও দু-তিনদিন মাঝারি শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে শীত পৌষের শুরুতে অনুভূত হওয়ার কথা ছিল সেটি মাঘের মধ্যবর্তী সময়ে অনুভূত হচ্ছে। কয়েক দিন শীতের তীব্রতা থাকতে পারে।’
এদিকে তিনদিন টানা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছে মাঝারি পর্যায়ের শৈত্যপ্রবাহ।
শুক্রবার সকালে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, ‘শুক্রবার তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বৃহষ্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ এর মধ্যেও পর্যায়কে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলে।’
‘হামরা ঠান্ডাত অনেক মুশকিলোত পড়ছি’
রংপুর নগরীর বাহার কাছনা এলাকার আবেয়া বেগম (৬২) বলেন, ‘হঠাৎ করি জার বাড়ি গেইল। কুয়াশা নাই, ঠাণ্ডা বাতাসোত খুব জার নাগতোছে। ঘর থেকে বাইরে হবার পাওছো না। খুলিত বান্দা গরু গুলাও জারোত ডোকরাওছে।’
গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের গান্নারপাড়ে তিস্তা বাঁধে আশ্রিত নদী ভাঙ্গনের শিকার মোন্নাফ মিয়া বলেন, ‘শহরোত কী ঠাণ্ডা, নদীর পাড়োত বেশি ঠাণ্ডা। শীতোত এ্যাটে না আসিয়া বুঝা যাবার ন্যায়। এ্যাটে কুয়াশাও আচে, ঠাণ্ডা বাতাসও মেলা। ঘরের ভিতরোত থাকিয়াও ছাওয়াগুলার নাক থ্যাকি পানি গরাইতোছে। অইদও আইসে আর যায়। হামরা ঠান্ডাত অনেক মুশকিলোত পড়ছি।’
উত্তরের জেলা নীলফামারীর ডিমলাতেও চলছে শৈত্যপ্রবাহের দাপট।
নীলফামারী জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফেরদৌস পারভেজ বলেন, গত ৩ দিন ধরে দুপুর পর্যন্ত সূরে্যর দেখা মেলেনি। বিকেলে কিছুটা রোদ দেখা গেলেও খানিকপর কুয়াশার তাও ঢেকে যাচ্ছে।
ডিমলাতেও শীতজনিত রোগের প্রকোপে বেড়েছে। উত্তরের এই উপজেলা থেকে প্রতিদিনই ঠাণ্ডার নানা উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা।
বিএসডি/ এলএল