জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইনের (৩৭) বাবা ছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। অবসরগ্রহণের পর তিনি আবাসন ব্যবসা শুরু করেন। যুক্তরাজ্য থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফেরা জুবেইন ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সেবনে আসক্ত। এক পর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন এর কারবারেও। চার বছর ধরে আইস কারবারি এ তরুণ র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন তার কয়েক সহযোগীসহ।
সম্প্রতি দেখা গেছে, মাদক কারবারে যারা জড়িয়ে পড়ছে, তাদের মধ্যে জুবেইনের মতো ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানের সংখ্যাই বেশি। নতুন করে আলোচনায় আসা ব্যয়বহুল মাদক আইস, এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) এবং নেশাখোরদের কাছে ‘ব্রাউনি’ নামে পরিচিত গাঁজার কেকের কারবারি হিসেবে নাম উঠে আসছে ধনীর দুলালদের। শুধু তা-ই নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তাদের আটক করা হলে ছাড়ানোর জন্য একের পর এক ফোন-তদবির আসতে শুরু হয় প্রভাবশালীদের। সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য জানিয়ে বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণে তাদের কাউকেই অবশ্য ছাড় দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মাদক নির্মূলে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্প্রতি গুলশান-বনানীকেন্দ্রিক এলএসডি-আইস কারবারে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে। তারা বলছেন, বিদেশ থেকে এসব মাদক কিনতে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ বিট কয়েন।
এদিকে মরণনেশা ইয়াবার বিস্তার রোধে হিমশিম খাওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে নতুন ও ব্যয়বহুল এসব মাদকের বিস্তার রোধ করা।
গুলশান-বনানী এলাকায় বিকিকিনির একাধিক চক্র
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান-বনানী এলাকাকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে আইস-এলএসডি বিকিকিনির একাধিক চক্র। এসব চক্র বিদেশ থেকে দামি মাদক এনে ছোট গ্রুপগুলোর কাছে বিক্রি করছে। এর পর এসব গ্রুপ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে মাদকসেবীর হাতে। এ ক্ষেত্রে হোম ডেলিভারির সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অভিজাত এলাকায় গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি মাদককারবারি চক্রকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরাকেন্দ্রিক কিছু চক্রেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে গুলশান ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায় মাদক কারখানারও সন্ধান মিলেছিল।
মাদকবিরোধী অভিযানে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আইস মূলত অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এ দেশে আসছে। আইসের চালান প্রবেশ করছে থাইল্যান্ড-মিয়ানমার-টেকনাফ হয়ে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পাঠানো মাদকের চালান অনায়াসে পৌঁছে যাচ্ছে চক্রের সদস্যদের হাতে। ২০১০ সাল থেকে প্রথমবারের মতো আইসের চালান দেশে পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। আর এলএসডি মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশে চলে আসছে। বাংলাদেশে এলএসডি পাচারে ইউরোপের নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশগুলোয় বড় বড় চক্র রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে বিদেশি একটি ব্যাংকের ঢাকা শাখায় কর্মরত এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। ওই তরুণী বলেন, প্রথমে গাঁজা ও মদের প্রতি আসক্তি থাকলেও একটা পর্যায়ে বন্ধুদের মাধ্যমে আইসের সন্ধান পান। তিনি জানান, ধানমন্ডিকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে আইস কেনেন। বিত্তশালী পরিবারের এই তরুণী তার বেতনের একটি বড় অংশ খরচ করে ফেলছেন মাদকের পেছনে। জানালেন, মাদক সেবনের মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তার পেশাগত জীবনেও অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিজাত এলাকায় এসব মাদকের চক্র নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছি। তাদের নেটওয়ার্ক এবং চালান কীভাবে আসছে এসব বিষয়ে নজরদারি চলছে।
বিট কয়েনে অর্থ পরিশোধ
এলএসডি-আইসের মতো মাদক আসছে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে। এ ক্ষেত্রে সেসব দেশের মাদক সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিট কয়েনের মাধ্যমে। বিশ্বের কিছু দেশে বিট কয়েনের প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে অবৈধ এই ভার্চুয়াল মুদ্রার বৈধতা নেই। মূলত ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক এসব মাদক নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশি তরুণরা। বাংলাদেশে বর্তমানে এক বিট কয়েনের মূল্যমান ২৭ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি গ্রাম আইস বিদেশ থেকে কেনা হচ্ছে ১০ হাজার টাকায়। সেই হিসাবে মাত্র ১০০ গ্রাম আইসের মূল্য ১০ লাখ টাকা। আর প্রতি তিন মাইক্রো গ্রামে এক ব্লট বিবেচনা করা হয়। প্রতি ব্লট মাদক বিদেশ থেকে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায় কিনে দেশে ৩ হাজার টাকায় খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়। সেই হিসাবে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে এলএসডির চালান দেশে আনা হয়। বিপুল পরিমাণ এই অর্থ পরিশোধ করা হয় বিট কয়েনের মাধ্যমে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এলএসডির সন্ধান পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, এলএসডির ভয়াল পাশর্^প্রতিক্রিয়ার কারণে ছুরি দিয়ে নিজের গলা নিজেই কেটে ফেলেন হাফিজুর রহমান। এর ফলে তার মৃত্যু হয়। এর পরই এলএসডি মাদক নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় দেশে। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন; শুরু হয় অভিযান। হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় তার তিন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র সাদমান সাকিব ওরফে রূপল (২৫) ও আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তুর্জ এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আদিব আশরাফ (২৩)। তাদের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা মূল্যের ২০০ ব্লট এলএসডি জব্দ করে ডিবি।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিন তরুণই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান, নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তারা বলেন, চক্রটি ডার্কওয়েবের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ইউরোপের দেশগুলো থেকে এলএসডির চালান আমদানি করে; অর্থ পরিশোধ করে বিট কয়েনের মাধ্যমে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিন তরুণই ধনী পরিবারের সন্তান। তারা মাদক কেনার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার করেছিল।
অভিজাত এলাকায় মাদক কারখানা
রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, বানানী ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায় দামি মাদকের কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানার নেতৃত্বে থাকা অনেক তরুণ বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জিগাতলার ছয়তলা ভবনের ভূগর্ভস্থ তলা থেকে আইস, ক্রিস্টাল মেথ ও এমডিএমএ তৈরির গবেষণাগারের সন্ধান পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ সময় হাসিব মো. মুয়াম্মার রশিদ নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় হাজারীবাগ থানায় মামলা হয়।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ইয়াবা ডন হিসেবে পরিচিত আমিন হুদা ও তার সহযোগী আহসানুল হক ওরফে হাসান। এর পর গুলশানে হুদার একটি ফ্ল্যাটে ইয়াবা কারখানার সন্ধান পায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ওই ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা দুই মামলায় ২০১২ সালের ১৫ জুলাই এই মাদকসম্রাটকে ৭৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আমিন হুদার পর আরও দুই দফা গুলশানে মাদকের কারখানার সন্ধান মেলে। যেসব কারখানার সঙ্গেও যুক্ত ধনীর দুলালেরা।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আইস, ইয়াবা, অস্ত্রসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় উত্তরার একটি বাড়িতে বায়িং হাউসের ব্যবসার আড়ালে মাদকের কারখানা গড়ে তোলার সন্ধান মেলে। গ্রেপ্তার হওয়া মাদকচক্রের মূল সমন্বয়কারী তৌফিক হোসাইনের নেতৃত্বে চলত এ কারখানা। ‘ম্যাথ ল্যাব’ স্থাপন করে নতুন মাদক তৈরির চেষ্টা করছিলেন তারা। আইস ও ইয়াবার সঙ্গে ঘুমের ওষুধ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ‘ঝাক্কি’ নামে এক মাদকের উদ্ভব ঘটান তারা। এ মাদকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই ভয়ঙ্কর।
সেবন থেকে বিক্রেতা
এলএসডি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হলেও এ মাদকের সেবন বাংলাদেশে নতুন নয়। ২০১৯ সালে এলএসডিসহ দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তখন এক প্রবাসী বাংলাদেশির মাধ্যমে দেশে এলএসডি বেচাকেনার বিষয়টি জানতে পারে অধিদপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগ।
প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পারেন, গুলশান, উত্তরা ও কাফরুল এলাকায় এলএসডি ব্যবহার হচ্ছে। এর গ্রাহক উচ্চবিত্ত পরিবারের মাদকাসক্ত সন্তানরা। একটি ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে এটি বিক্রি হয়। এর পর অভিযানের স্বার্থে এ গ্রুপের সদস্য হন গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রাতে কাফরুল এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ মিলিগ্রাম তরল এলএসডি জব্দ করে ডিএনসি। ৪৬টি এলএসডি স্ট্রিপও জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ২০ বছর বয়সী দুই তরুণ ইয়াসের রিদওয়ান আনান ও সৈয়দ আহনাদ আতিফ মাহমুদকে। ১৫ জুলাই কাফরুল থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। একই বছরের ৪ জুলাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৫০ গ্রাম আইসসহ নাইজেরীয় নাগরিক আজাহ অ্যানাওচুকওয়া ওনিয়ানুসিকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তারই বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ৪৭২ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। এসব আইস বিদেশ থেকে আমদানি করেন এই নাইজেরিয়ান।
এ ছাড়া র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আইস ও এলএসডি কারবারিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে জানা যায়, ধনী পরিবারের সন্তানরাও শুরুর দিকে মূলত সেবনের জন্য এ মাদক কেনেন। একটা পর্যায়ে বড় গ্রুপ তৈরি হলে এর কারবারেও জড়িয়ে পড়েন। এসব মাদক বিক্রির মাধ্যমে বিপুল অর্থপ্রাপ্তির লোভে তারা অন্ধকার জগতে পা বাড়ান।
জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরেরর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোসাদ্দেক হোসেন রেজা বলেন, আমরা দেখেছি, এলএসডি ও আইস বিক্রি এবং সেবনে যুক্ত তরুণরা উচ্চবিত্ত শ্রেণির। কারণ এসব মাদকের দাম অনেক বেশি।
দক্ষিণ এশিয়ায় মাদকের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘মাদক আসক্তির দুটি প্রেক্ষাপট আছে। যারা মাদক সেবন করেন, এটা এক ধরনের আসক্তি। আর যারা কারবার করেন, সেটা আরেক ধরনের আসক্তি। এ আসক্তির কারণে তারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েন আরও কত টাকা কামানো যায় এটা ভেবে। এ প্রতিযোগিতার শেষ নেই (আনএন্ডিং রেস)। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তাদের ঠেকানো যাবে না।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে একসময় মাদক হিসেবে আফিম ও গাঁজা বিকিকিনি হতো। আশির দশকে সেগুলো নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় কোডিন মিশ্রিত কফ সিরাপ নিষিদ্ধ হওয়ার পর চোরাইপথে আসা ফেনসিডিল হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের কাছে খুবই প্রিয়। গত এক যুগে ফেনসিডিলের এ স্থান দখল করে নিয়েছে ইয়াবা। ফেনসিডিল মূলত আসত ভারত থেকে, আর ইয়াবা আসছে মিয়ানমার থেকে। সরকারের পক্ষ থেকে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়েও ইয়াবা বন্ধে কার্যকর ফল পাওয়া যায়নি। দেশে বর্তমানে ৬৬ থেকে ৭০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সরকারি হিসাবে, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের মধ্যেই ২০১৮ সালে ৫ কোটি ৩০ লাখ পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া গত ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উদ্ধার করা হয় ২৩ কোটিরও বেশি এই বড়ি।
জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউএনওডিসির মতে, যত মাদক বিক্রি হয়, ধরা পড়ে তার মাত্র ১০ শতাংশ। সেই হিসাবে ২০১৮ সালেই শুধু ইয়াবা বিক্রি হয়েছে ৫৩ কোটির মতো। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশে এক হাজার এলএসডি সেবনকারীকে চিহ্নিত করেছে ডিবি পুলিশ। এ ছাড়া বিনোদনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিটের ‘এলএসডিগাইস’ নামে একটি সাব রেডিট গ্রুপের সদস্য সংখ্যা সাত হাজার। গ্রুপটি এলএসডি বিক্রির অন্যতম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।