নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাঁচ শতাধিক মানুষ জমজমাট বিয়ের আসরে। তবে এই বিয়েতে বর-কনে কেউ মানুষ নয়। ‘বর’ বট গাছ ও ‘কনে’ পাইকড় (পাকুর) গাছ! শুধু তা-ই নয়, বিয়ের আগে বটগাছেন নাম রাখা হয় ‘অন্তর’ ও পাইকড় গাছের নাম রাখা হয় ‘রুপালি’।
হিন্দুরীতি অনুসারে কলাগাছ দিয়ে সাজানো হয় বিয়ের আসর ও ছাদনাতলা।
দিনভর চলে গান বাজনা। উৎসবে মেতে ওঠেন বর ও কনে পক্ষ। পুরো শ্মশান ঘাট সাজানো হয় রঙিন কাগজে। এমনকি সামিয়ানাও টাঙানো হয়। পাশেই ব্যস্ত রাঁধুনিরা। বিয়েতে আসা অতিথিদের পোলাও, সবজি, ঘণ্ট, পায়েস এবং জলপাইয়ের আচার খেতে দেওয়া হয়।
এমন ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার সদর উপজেলার মগলিশপুর করতোয়া সার্বজনীন শ্মশান ঘাটে। গ্রামের মঙ্গল কামনায় ওই দুই গাছের বিয়ে দেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিয়েতে অন্তরের (বটগাছ) বাবা-মা হয়েছিলেন ওই গ্রামের সুশীল চন্দ্র দাস ও প্রতিভা রানী দম্পতি। আর রুপালির (পাইকড় গাছ) বাবা-মা হয়েছিলেন নাথু রাম সরকার ও মা হয়েছিলেন চপলা রানী দম্পতি।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের আয়োজন। বট-পাকুরের বিয়ে দেখতে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। দুপুরে নারায়ণ পূজার মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠে গ্রামবাসীরা। বিয়ে দেখতে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেদিয়ে চলে বট-পাকুরের বিয়ে।
হিন্দুধর্ম মতে বট-পাকুরের বিয়ে হলে গ্রামের মঙ্গল হয়। অনেক আগে থেকেই তাদের মধ্যে দুই গাছের মধ্যে বিয়ের রীতির প্রচলন আছে। পুরনো রীতি মেনে গাছ দুটির বিয়ে দেওয়া হয়।
বট-পাকুরের বিয়েতে পুরোহিত ছিলেন প্রদীপ চন্দ্র। গোধূলি লগ্নে (সন্ধ্যা) মন্ত্র পড়ে বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করেন তিনি।
বটগাছের (বর) বাবার দায়িত্বে থাকা সুশীল চন্দ্র দাস ও পাইকড় গাছের (কনে) গাছের বাবার দায়িত্বে থাকা নাথু রাম সরকার জানান, বট-পাকুরের বিয়ে পুরনো রীতি ও বিশ্বাস। বটগাছ ও পাকুর গাছ একসঙ্গে থাকলে বিয়ে দিতে হয়। এতে গ্রামের মঙ্গল হয়। বিয়েটা বট-পাকুরের মধ্যে হলেও তাদের মধ্যে আত্মীয়র সম্পর্ক অটুট থাকবে।
সার্বজনীন শ্মশান ঘাট কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস চন্দ্র দাস কার্তিক জানান, শাস্ত্রমতে বট-পাকুর পাশাপাশি থাকলে গাছ দুটির বিয়ে দিতে হয়। রীতি অনুসারে ঐ দুই গাছের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বট-পাকুরের বিয়ে হয় শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মগলিশপুর এলাকায়। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজু হোসেন জানান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পুরনো রীতি অনুসারে বট-পাকুরের বিয়ে দিয়েছেন। মানুষের বিয়েতে যেমন আয়োজন করা হয় ঠিক তেমনই আয়োজনে দুটি গাছের বিয়ে দেওয়া হয়।