নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার তালশো গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে নুরুল ইসলাম। তিন বছর চার মাস আগে ইউক্রেন গেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগার পর তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে প্রথম থেকে চেষ্টা করেন। কিন্তু মালিক পাসপোর্ট আটকে রাখে। তবে তিনি পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন।
তিনি কাজ করতেন কিয়েভ থেকে দুই শ’ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের একটি গ্রামের শেরবানি হিফচকোতে। গ্রামের পাশের সড়কে এসে দেখেন গাড়ি চলাচল বন্ধ। কিছু জরুরি গাড়ি চলছে। বেশি টাকা নেই কোনো গাড়ি নেয়ার। তাই হাঁটা ধরেন। প্রায় তিন দিনে ২০০ কিলোমিটারের বেশি হেঁটেছেন তিনি। ঘুম নেই। আধা পেট খাওয়া সময় কাটছে। গায়ে মোটা শীতের পোশাক। হাতে কাপড়ের ব্যাগ।
কারো দিকে যেন কারও তাকানোর সময় নেই। সবাই ছুটছেন পোলাল্যান্ড সীমান্তের দিকে। তিনি এই প্রতিনিধির সাথে যখন কথা বলেন, তখন মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটা। ইউক্রেনে আরো চার ঘণ্টা এগিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার মতো। কিয়েভের বাগজালনা রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে তিনি কথা বলছিলেন। তিনি অপেক্ষা করছিলেন ট্রেনের জন্য। ট্রেন যোগে যেতে চান পোলাল্যান্ড। তিনি শুনেছেন পোলাল্যান্ড সীমান্তে বাংলাদেশ দূতাবাসের লোকজন বাংলাদেশিদের শনাক্ত করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিচ্ছে। তার পাসপোর্ট নেই। তাকেও যেন গ্রহণ করে সেই বিষয়ে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকষণ করেন। তার কণ্ঠে উৎকণ্ঠা আর ক্লান্তি স্পষ্ট।
তিনি বলেন, তিনি কাজ করতেন একটি ভেড়ার খামারে। মালিক কয়েক মাসের বেতনও দেননি। হেঁটে আসার সময় দূরে বোমার শব্দ শুনেছেন। তার খামারের অফিস একটু দূরে শহর এলাকায়। সেখানে প্রথম দিন বোমা হামলায় ১৩৭ জন মারা গেছে।
তিনি বলেন, ইউক্রেন আসতে খরচ করেছেন প্রায় নয় লাখ টাকা। প্রথম বছর জেল খেটেছেন। ২য় বছর পেটে ভাতে ছিলেন। ৩য় বছর থেকে কাজ করছেন। দিনে ২০ ঘণ্টার মতো কাজ। বেতন ২৫-৩০ হাজার টাকা।
দেশে তার দুই মেয়ে এক ছেলে আছে। পরিবারের সাথে মাঝে মধ্যে কথা হয়। বাবা মৃত, মা তাছলিমা খাতুন, স্ত্রী ডলি খাতুন এবং সন্তানসহ সবার মধ্যে তাকে নিয়ে উৎকণ্ঠা। যে টাকা খরচ করে এসেছেন সেটাও শোধ হয়নি। সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। কি করবেন জানেন না। বর্তমানে ছুটছেন জীবন বাঁচাতে।
বিএসডি/ এলএল