নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বড় অংশ দৃশ্যত নিষ্ক্রিয়। সভা-সেমিনারে দেখা গেলেও মাঠের কোনো কর্মসূচিতে তাদের দেখা যায়নি। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এসব নিষ্ক্রিয় নেতাকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এ ছাড়া ভাইস-চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মতো সিনিয়র নেতাদেরও দলে গুরুত্ব বাড়ছে।
বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটি ছাড়াও ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে কর্মকর্তা-সম্পাদক হিসাবে আছেন ২০৯ জন, যার মধ্যে ভাইস-চেয়ারম্যান ৩৫ জন। এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্য রয়েছেন ২৯৩ জন। পাশাপাশি ৭৩ সদস্যের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলও রয়েছে। যদিও এর মধ্যে অন্তত ৬০ জনের মতো নেতা ইন্তেকাল করেছেন। কয়েকজন পদত্যাগও করেছেন।
নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির আকার বড় হলেও অধিকাংশ নেতাকেই মাঠের কর্মসূচিতে দেখা যায় না। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে নিজ থেকেই নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। তাছাড়া বাস্তবতা হচ্ছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্যাতন, হামলা-মামলার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা আছে। গত জাতীয় নির্বাচনের পরে তা আরও বেড়েছে। এ সময়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যদি সক্রিয়ভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন তাহলে কর্মীদের মধ্যেও হতাশা কমিয়ে তাদের চাঙ্গা করা সম্ভব হতো। বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠকে আলোচনা হয়। নেতাদের সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে জেলায় জেলায় সমাবেশে ভাইস-চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদেরও প্রধান অতিথি করা হয়। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচি সফল করতে ৮২ সাংগঠনিক জেলায় সাংগঠনিক টিম করা হয়েছে। যেখানেও নির্বাহী কমিটির বেশির ভাগ নেতাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান সময়কে বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ছিল। কিন্তু তা কাটিয়ে উঠে নেতাকর্মীদের মনোবল এখন আবারও চাঙ্গা হয়েছে। যার প্রমাণ জেলার সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণ। এখনো কর্মসূচি চলছে। শত বাধা সত্ত্বেও এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর ঢল নামছে। কর্মসূচি সফল করতে সব সাংগঠনিক জেলায় টিম করা হয়েছে। সেখানে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের কর্মসূচি সফলে বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবেদিন ফারুক, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, মনিরুল হক চৌধুরী, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুস সালামের মতো অনেকেও জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সম্পাদক, সহ-সম্পাদক ও নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অধিকাংশকেই টিম প্রধান করা হয়েছে। দায়িত্ব পেয়ে নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
নিষ্ক্রিয় ও অভিজ্ঞ নেতাদের সক্রিয় করার বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন টার্গেট করেই এসব করা হচ্ছে। কারণ বিএনপির মূল দাবি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার। এ দাবিতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প দেখছে না দল।
পাশাপাশি বৃহত্তর ঐক্য গড়তে ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। ঐক্য ও আন্দোলন সফলে পর্যায়ক্রমে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সব নেতাকে সম্পৃক্ত করা হবে। সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি মধ্যমসারির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে যাতে করে সব নেতার সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে দাবি আদায় করা যায়। সেভাবেই নীতিনির্ধারকরা পরিকল্পনা করছেন।
নেতারা আরও জানান, কমিটি পুনর্গঠন কেন্দ করে ক্ষোভ থেকে তৃণমূলেরও অনেক নেতা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। যাদের মধ্যে অনেকে প্রত্যাশিত দলীয় পদ পাননি, আবার কেউ কেউ কোনো পদই পাননি। জেলা-উপজেলাসহ প্রায় সব পর্যায়ে যেসব নেতা নিষ্ক্রিয় তাদেরও তালিকা হচ্ছে। কেন্দ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের যথাযথ পদ দিয়ে মূল্যায়ন করবে যাতে করে তারা আবারও সক্রিয় হন, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে পারেন।
বিএসডি/ এফএস