চলাচলে বিধিনিষেধ থাকার পরও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথ পাড়ি দিয়ে ঢাকার দিকে ছুটছে মানুষ। ঢাকা থেকে গ্রামের দিকে ফেরা মানুষের চাপও রয়েছে। তবে এই নৌপথে ১৫টি ফেরি স্বাভাবিক নিয়মে চলাচল করায় কিছু পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া যাত্রীদের পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর নানা প্রান্ত থেকে আসা ঢাকামুখী মানুষের ভিড়। ঘাটে আসা যাত্রীরা বেশির ভাগই এসেছে মাহিন্দ্র, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ তিন চাকার থ্রি–হুইলারে করে। এসব যানবাহনে গাদাগাদি করে আসা যাত্রীরা ঘাটের টার্মিনালে নেমে চলে যাচ্ছে ফেরিঘাটের পন্টুনে। কিছুক্ষণ পন্টুনে অপেক্ষা করেই তারা ফেরিতে উঠতে পারছে। অনেকেই আবার পন্টুনে আসামাত্রই ফেরি পাচ্ছে। ২৫ টাকার ভাড়ার একটি টিকিট কেটে যাত্রীরা ফেরিতে উঠে পড়ছে। ফেরি পাওয়া নিয়ে যাত্রীদের কোনো দুচিন্তায় পড়তে হচ্ছে না। ঘাটে আসা কিছু যাত্রীর মুখে মাস্ক দেখা গেলেও অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছে না। দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও ট্রাফিক পুলিশও অনেকটা গা–ছাড়া। ঘাট এলাকায় লকডাউন নিয়ে তাদের নেই কোনো প্রচার-প্রচারণা।
অন্যদিকে ফেরি পারাপারের জন্য প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসও বাংলাবাজার ঘাটে আসামাত্রই ফেরিতে উঠতে পারছে। তবে ঢাকামুখী যাত্রীদের কিছুটা চাপ থাকায় ফেরিতে পণ্যবাহী ট্রাক চাহিদা অনুযায়ী পারাপার করা হচ্ছে না। ফলে বাংলাবাজার ঘাটের টার্মিনালে আটকা পড়েছে দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক।
লকডাউনে তো দেখি বাস ছাড়া সবকিছুই চলে। তবে ভাড়া মেলা বেশি। সকালে মাহিন্দ্রতে করে গ্রামের রাস্তা ধরে ঘাটে আসি। এখানে আমার ১৫০ টাকার ভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চইলা গেছে।
আল-আমিন, শরীয়তপুর থেকে বাংলাবাজার ঘাটে আসা নির্মাণশ্রমিক
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বরিশালের মুলাদী থেকে ভাড়ার মোটরসাইকেলে করে ঘাটে আসেন খোকন খান (৪০)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পরিবার নিয়ে এলাকায় যান। ভোট শেষ করেই পরের দিন ঢাকায় ফেরার কথা। কিন্তু লকডাউনের কারণে কোনো বাস চলে না। তাই বাড়িতে আটকা পড়েন। শুক্রবার সকালে মালিক ফোন দিয়ে বলেছেন, আজকের মধ্যে চাকরিতে জয়েন না করতে পারলে চাকরি হারাতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার পথে যাচ্ছেন।
শরীয়তপুর থেকে আসা নির্মাণশ্রমিক আল-আমিন বলেন, ‘আম্মায় অসুস্থ থাকায় গত সপ্তাহে কাম ফালাইয়া বাড়িতে চইল্লা আসি। লকডাউনে তো দেখি বাস ছাড়া সবকিছুই চলে। তবে ভাড়া মেলা বেশি। সকালে মাহিন্দ্রতে করে গ্রামের রাস্তা ধরে ঘাটে আসি। এখানে আমার ১৫০ টাকার ভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চইলা গেছে। এখন ফেরিটা পার হইয়া ঢাকায় যাইতে পারলেই বাঁচি।’
আটজন যাত্রী বোঝাই করে বাংলাবাজার ঘাটে আসেন বরিশালের মাহিন্দ্রচালক মোছাব্বের হোসেন। এত যাত্রী তোলার ব্যাপারে এই চালক বলেন, ‘আমরা লাইনের গাড়ি। আটজনের বেশি যাত্রী তোলা হয় না। এই গাড়িতে জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়ায় আমরা বরিশাল থেকে ঘাটে আসি। মাঝেমধ্যে পুলিশ ধরে। তবে আটকাইয়া রাখে না। তা ছাড়া আমরা তো মহাসড়ক ধরে কম চলি, ছোট রাস্তা দিয়ে চালাই।
বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ১৫টি ফেরি উভয় ঘাট থেকে যাত্রী ও জরুরি প্রয়োজনে আসা যানবাহন পারাপার করছে। উভয় দিকেই যাত্রীর চাপ আছে। ঢাকায় যেমন মানুষ যাচ্ছে, তেমনি ঢাকা থেকে গ্রামে ঢুকছে। সব ফেরি চলায় ঘাটে অতিরিক্ত চাপ নেই।’ স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘাটে আসা এত মানুষকে বলে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে মাস্ক পরে ফেরিতে ওঠাতে। মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে মাইকিং বা প্রচারণা করেও লাভ নেই।’
বাংলাবাজার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) জামালউদ্দিন বলেন, ‘মানুষকে আটকে রাখা যাচ্ছে না। তারা নানা উপায়ে ঘাটে চলে আসছে। ঘাটে আসা থ্রি-হুইলারগুলো ঠেকাতে তাদের চাবি নিয়ে যাচ্ছি, মামলা দিচ্ছি। আমাদের চোখে পড়ামাত্রই মাইক্রোবাস, বাসসহ যাত্রী বহন করা গাড়িগুলো ধরে রাখা হচ্ছে। গত তিন দিনে ১৩টি মামলা আমরা দিয়েছি। এর ফলে গত দু্ই দিনের তুলনায় আজকে এসব গাড়ির চাপ কমে আসছে। আরও কমে আসবে।’