নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাবে সরকার। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল, শক্তিশালী, মজবুত করতে পারি। তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।
গতকাল চট্টগ্রামের মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ৪১তম ব্যাচ ক্যাডেটদের ‘মুজিববর্ষ পাসিং আউট প্যারেড’ অবলোকন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি চট্টগ্রামের মেরিন ফিশারিজ একাডেমি প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের উদ্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অডিও ক্লিপ শোনানো হয়। সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। স্বাগত বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। এ বছর একাডেমির ৪১তম ব্যাচে নটিক্যাল বিভাগে ৩৩ জন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩১ জন ও মেরিন ফিশারিজ বিভাগে ২০ জন ক্যাডেটসহ মোট ৮৪ জন নারী ও পুরুষ ক্যাডেট পাস আউট হন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম পদক বিতরণ করেন। এ বছর সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী নটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের এইচএম বেনুজির আহমদ বেস্ট অল রাউন্ডার গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। তিন বিভাগে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী নটিক্যাল বিভাগের আসিফ আলম দর্পণ, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মো. আরিফুল ইসলাম ও মেরিন ফিশারিজে আবদুর রহমান আল ওয়াদুদ বেস্ট ইন প্রফেশনাল ট্রেনিং সিলভার মেডেল পেয়েছেন। নারী ক্যাডেটদের মধ্যে মেরিন ফিশারিজ বিভাগের রুপায়দা রহমান বেস্ট ফিমেইল ইন প্রফেশনাল ট্রেনিং সিলভার মেডেল পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট, বিএসসি, শিপিং এজেন্ট প্রতিনিধি, আমন্ত্রিত অতিথি, ক্যাডেটদের অভিভাবকেরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগর শুধু আমাদের জন্য নয়, এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিশাল সম্পদ রয়েছে। সেই সম্পদ আমাদের আহরণ করতে হবে। কিন্তু সমুদ্রের মৎস্য আহরণ বা সমুদ্র সম্পদ আহরণে এখনো আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে এবং আমরা তা করব। তিনি বলেন, সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল, শক্তিশালী, মজবুত করতে পারি। তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে এমডিজি খুব সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। আমরা এসডিজিও সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। করোনার কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু আমরা এগিয়ে চলেছি। অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা। শুধু স্বপ্ন না সেই পথও তিনি প্রদর্শন করে গেছেন। প্রয়োজনীয় সব আইন, সবকিছু আমাদের করে দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিশাল সমুদ্রসীমা। যে সীমায় আমাদের কোনো অধিকার ছিল না। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা প্রথম বাংলাদেশের জন্য দ্যা টেরিটোরিয়াল ওয়ার্টাস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন, যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে আমরা এ বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত একাডেমি থেকে সফলভাবে পাসকৃত ৫৮ জন মহিলা ক্যাডেটসহ ১ হাজার ৯১৪ জন ক্যাডেট দক্ষতার সঙ্গে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেরিটাইম সেক্টরে কর্মরত থেকে দেশের অর্থনীতির অবদান রেখে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাসিং আউট প্যারেড অনুষ্ঠানে তোমাদের মাঝে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত, যদিও সরাসরি উপস্থিত হতে পারলে আরও ভালো লাগত। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে আমার যাতায়াত খুব সীমিত। যে কারণে আসতে পারিনি। এ একাডেমি হতে প্রশিক্ষিত হয়ে তোমরা গভীর সমুদ্রের অকুতোভয় নাবিক হতে চলেছ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কঠোর অধ্যবসায়, কঠিন পরিশ্রম এবং প্রজ্ঞা-প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত এই জ্ঞান তোমাদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, আমি আশা করি, সদা পরিবর্তনশীল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ আধুনিক এ বিশ্বে টিকে থাকার জন্য এরই মধ্যে তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা নিজেদের তৈরি করে নিতে পারবে। কর্ম জীবনে উন্নতির প্রধান ভিত্তিই হলো কঠোর পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা, সততা, কর্মদক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম। এ বোধগুলো আত্মস্থ করে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং দেশের উন্নতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করবে। যেন ভবিষ্যৎ যারা বংশধর তারাও সুন্দর জীবন পায়। আমাদের স্বাধীনতার যে আদর্শ, নীতি সেটাও মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, ‘এই সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে পারি, মজবুত করতে পারি তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা এরই মধ্যে এমডিজি খুব সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছি। জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজিও সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এ বাধা বাধা নয়, আমরা এগিয়ে চলেছি, অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি, কাজেই এই মাছ আমাদের একটা বিরাট সম্পদ। যে সম্পদ শুধু আমাদের পুষ্টি জোগায় না, সেই সঙ্গে এই সম্পদ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করেও অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারি। সে জন্য মৎস্য উৎপাদনে যথেষ্ট গবেষণা করে যাচ্ছি এবং সাফল্যও পেয়েছি। কিন্তু সমুদ্রের মৎস্য আহরণ বা সমুদ্র সম্পদ আহরণে এখনো আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে এবং আমরা তা করব, এটি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা চেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন। এরপর অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ২১টি বছর বাঙালির জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর যে উদ্যোগ নিয়েছে এবং দ্বিতীয় দফা সরকারে আসার পর যে সব কর্মসূচি আমরা পালন করে যাচ্ছি, তার ফলে ২০২১ সালের মধ্যেই আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, যা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’
পাসিং আউট ক্যাডেটদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে সেটিই বিশ্বাস করি। আর তোমরাই তো হবে এই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশের কর্ণধার।
বিএসডি/ এফএস