করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলে নিয়েছে ভারত। সংক্রমণ হার ১৮ দিন ধরে ৫ শতাংশের নিচে। এই পরিস্থিতিতে শিগগিরই দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে বার্তা দিতে সচেষ্ট হয়েছেন কেন্দ্র সরকারের মন্ত্রী-আমলারা। বাণিজ্য সংগঠন ফিকি ও উপদেষ্টা সংস্থা ধ্রুব অ্যাডভাইজার্সের সমীক্ষাতেও দাবি করা হয়েছে, সংক্রমণ কমার ফলে ধাপে ধাপে রাজ্যভিত্তিক লকডাউন ও নানা বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার ফলে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে। ৬-১২ মাসের মধ্যে ব্যবসায় আবার উন্নতি দেখা যাবে।
তবে একই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দ্বিতীয় দফার সংক্রমণে ভারতের স্বাস্থ্য খাত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সমীক্ষকদের সতর্কবার্তা, করোনার সম্ভাব্য পরবর্তী ঢেউ ঠেকাতেও জোরদার প্রস্তুতি দরকার। সে লক্ষ্যে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। উল্লেখযোগ্য হলো, তাঁরা প্রতিষেধক ও স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে ব্যয় বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। ইকোনমিক টাইমস-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
দুই শতাধিক কোম্পানির ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে ফিকি। প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ৫৮ শতাংশ সংস্থার মতে, দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ তাদের ব্যবসায় বড় ধাক্কা দিয়েছে। প্রায় একই সংখ্যক কোম্পানি জানিয়েছে, চাহিদা পড়ে যাওয়াই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারতে ফিকির প্রেসিডেন্ট উদয় শংকরের বক্তব্য, ‘রাজ্যগুলোতে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে পরের ঢেউগুলোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অগ্রাধিকার দিতে হবে প্রতিষেধককে।’
এদিকে চলতি অর্থবছরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অন্তত ২ লাখ কোটি রুপি ক্ষতি হতে চলেছে ভারতীয় অর্থনীতির। জুন মাসের মাসিক বুলেটিনে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) এ তথ্য জানিয়েছে। আরবিআইয়ের পর্যবেক্ষণ, মানুষের সচেতনতা অনেকটা বৃদ্ধি পেলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। গার্হস্থ্য চাহিদার ওপরেই মূলত দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব পড়েছে। আর সে কারণে বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা দেখছে আরবিআই। তবে এর সঙ্গে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন বা জিডিপির সরাসরি যোগসূত্র নেই বলেই জানিয়েছে আরবিআই।
আরবিআই আরও জানিয়েছে, ব্যাংকে সঞ্চিত মানুষের আমানত ক্রমেই কমছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, মানুষের হাতে নগদ টাকা কমেছে, যার প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন গার্হস্থ্য চাহিদায়।
একই ভাবে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়াও (সিবিআই) তাদের মাসিক বুলেটিন প্রকাশ করেছে। তাদের মাসিক বুলেটিনে ভারতের অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা, আর্থিক কাঠামো ও দেশের সার্বিক উৎপাদনের রেখাচিত্র তিনটি আলাদা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানেও অর্থনীতির ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। তাদের মতে, যত দ্রুত বেশিসংখ্যক টিকা দেওয়া যাবে, তত দ্রুত এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবে ভারত।
মহামারির আগে থেকেই ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে। মূলত মোদি সরকারের বড় নোট বাতিল এবং জিএসটি আরোপের সিদ্ধান্তের পর থেকেই কমতে শুরু করে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার। এতে দেশটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিশ্লেষকেরা বলেন, এঁরাই অর্থনীতির প্রাণ। এই খাতেই সবচেয়ে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এরপর আসে কোভিড। দীর্ঘদিন লকডাউন চলার পর ভারতীয় অর্থনীতি যখন কেবলই প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরে, তখনই শুরু হয় ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ।