নিজস্ব প্রতিবেদক:
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা গ্রামের জাবিদ আল মামুন স্বপ্ন বুনছেন ত্বীন ফল চাষ করে। এই ফলের আকার কাকডুমুর-এর চাইতে বড়, এটি একটি জনপ্রিয় মিষ্টি ও রসালো ফল।
ত্বীন বা আঞ্জির গাছ ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। হিন্দি, মারাঠি, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় এই ফলকে আঞ্জির বলা হয় এবং আরবি ভাষায় এর নাম ত্বীন।
পবিত্র আল কোরআনে ‘ত্বীন’ (আঞ্জির) নামে একটি সূরা রয়েছে। সেখানে এই ফলকে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত বা অনুগ্রহরূপে ব্যক্ত করা হয়ে। পৃথিবীর অনেক দেশে এর চাষ হয়, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় এবং এটি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আফগানিস্থান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। এর আদি নিবাস মধ্যপ্রাচ্য।
ত্বীন ফল চাষি তরুণ উদ্যোক্তা জাবিদ আল মামুন (২৭) উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কীর্তনখোলা গ্রামের মুস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। জাবিদ করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই বড়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩৫ শতাংশ জমির মধ্যে ত্বীন ফলের আবাদ করেছেন জাবিদ। দেখতে আকারে দেশীয় ডুমুরের মতো। ত্বীন ফল বাগানের চারপাশে নেট দিয়েছেন। যাতে করে কোনো পশু-পাখি বাগানের ভিতরে গাছ ও ফল নষ্ট করতে না পারে। ছোট বড় সকল গাছেই ত্বীন ফল ধরেছে। অনেক গাছেই ত্বীন ফল পাকতে শুরু করছে। প্রথমবারের মতো ত্বীন গাছে ফল আসতে শুরু হওয়ায় দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের। ত্বীন ফল চাষ করে উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।
ত্বীন ফল চাষি জাবিদ আল মামুন বলেন, ২০১৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করি। চাকরি না পেয়ে বেকার হয়ে বসেছিলাম বাড়িতে। করোনাকালীন সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। তখন অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং চাকরি হারিয়েছে অনেকেই। করোনাকালীন সময় চিন্তা ভাবনা করি চাকরি না করে কি করা যায়। তখন আমি ইউটিউবে দেখি কুরআনে বর্ণিত ত্বীন ফল চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে। খোঁজ নেই কোথায় ত্বীন ফল চাষ হচ্ছে বা পাওয়া যায়। পরে জানতে পারি গাজীপুরে চাষ হচ্ছে ত্বীন ফল। ত্বীন ফলের বিষয়ে কর্মশালায় যোগদান করি গাজীপুর শ্রীপুরে। প্রশিক্ষণ শেষ করে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৬০০ চারা ক্রয় করে বাড়ির পাশে ৩৫ শতাংশ জমিতে রোপন করি। প্রতিটি চারা ক্রয় করতে খরচ হয়েছে ৫২০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে কিছুটা শঙ্কায় ছিলাম। পরে কঠোর পরিশ্রম, নিবিড় পরিচর্যা আর কৃষি অফিসের লোকজনের পরামর্শে সফল হয়েছি। দুই মাসের মধ্যে গাছে ত্বীন ফল আসতে শুরু করে। ৬ মাসের মধ্যে ফল বিক্রি শুরু করি। এ বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ত্বীন ফল পাকতে শুরু করে। প্রতি কেজি ত্বীন ফল বিক্রি করা হয় ৮০০-১০০০ টাকা করে। এ বছর একটি গাছে থেকে ৩-৪ কেজি ফল পাবো। আশা করছি দ্বিতীয় বছর ৭-১০ কেজি ফল আসবে। তিন বছর পর থেকে ১টি গাছে ২০-২৫ কেজি ফলন দিবে। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে টানা ৩৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে একটি ত্বীন গাছ। আকারে দেশীয় ডুমুর গুলোর চেয়ে বেশ বড় হয়। পাকলে বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়। আঁটি ও বিচিহীন ফলটি আবরণসহ খাওয়া যায়। এ পর্যন্ত ৫০-৬০ কেজি ত্বীন ফল তোলতে পেরেছি। বিক্রি করা হয়েছে ৫০-৫৫ হাজার টাকা। আশা করছি এ বছর ৯-১২ লাখ টাকার ত্বীন ফল বিক্রি করতে পারবো। এছাড়াও ৪-৫ লাখ টাকার কলম চারা বিক্রি করতে পারবো। প্রতিনিয়ত একজন কর্মচারি ত্বীন গাছ পরিচর্যার জন্য রাখা হয়েছে।
ত্বীন ফল চাষি নুরে আলম বলেন, জাবিদের পরামর্শ নিয়ে আমিও ১৮ শতাংশ জমিতে ২০০ ত্বীন ফলের চারা রোপন করেছি। আমার রোপনকৃত ত্বীন ফল গাছে ত্বীন ফল এসেছে। আমার গাছে ত্বীন ফল পাকতে শুরু করছে। আমিও ত্বীন ফল বিক্রি করতে পারবো। আশা করছি আমিও ত্বীন ফল চাষ করে লাভবান হবো।
স্থানীয় কৃষক হাজী শহীদুল্লাহ বলেন, জাবিদ যখন ত্বীন ফলের বাগান করল। তখন আমার মনে আশা জাগে। পরে জাবিদের কাছে থেকে তিনটি ত্বীন ফলের চারা বাড়িতে নিয়ে টবের মধ্যে রোপন করি। আমার গাছেও ত্বীন ফল এসেছে। আমিও সামনে ত্বীন ফলের চাষ করবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন বলেন, সখীপুর উপজেলায় ত্বীন ফল নতুন সংযোজন হয়েছে। এ উপজেলায় ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। মালটা, কলা, কুলসহ অন্যান্য ফসল ও ফল চাষ হচ্ছে । সখীপুরে ত্বীন চাষে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একজন কৃষক ৩৫ শতাংশ জমিতে ত্বীন ফল চাষ করেছেন। আশা করা যাচ্ছে তিনি ভালো ফলন পাবেন। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ত্বীন ফলের জমিতে গিয়ে নিয়মিত পরিদর্শন করছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন। তাকে দেখে অনেক কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন ত্বীন ফল চাষে।
বিএসডি/ এলএল