আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউক্রেনে দুটি রাজনৈতিক ধারা প্রবল। একটি ধারা পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেওয়ার পাশাপাশি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে আগ্রহী। অপর ধারাটি রুশপন্থী। তারা রাশিয়ার বলয়ে থাকতে চায়।
ইউক্রেনের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ রুশভাষী। তারা জাতিগতভাবেও রুশ। রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক-সামাজিক ঘনিষ্ঠতা আছে।
বিক্ষোভের মুখে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পতন হয়। তিনি দেশ ছেড়ে পালান। ইয়ানুকোভিচ ইইউর সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। তখন পুতিন চাপ বাড়ান। চাপে পড়ে ইয়ানুকোভিচ ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসেন। ফলে ইউক্রেনে তাঁর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয়।
ইয়ানুকোভিচের পর যাঁরা ইউক্রেনের ক্ষমতায় আসেন, তাঁরা ইইউপন্থী বলে পরিচিত। তাঁদের নানা পদক্ষেপে পুতিন ক্ষুব্ধ হন। ইয়ানুকোভিচের পতনের পর পূর্ব ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয় রাশিয়া।
প্রায় ২০০ বছর ধরে রাশিয়ার অংশ ছিল ক্রিমিয়া। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ তৎকালীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের কাছে ক্রিমিয়া হস্তান্তর করেন। তখন রুশ নেতৃত্ব ভাবতে পারেনি যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হবে।
ক্রিমিয়ার ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। কৌশলগত কারণে রাশিয়ার কাছে ক্রিমিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সুযোগ পেয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য নয় ইউক্রেন। তবে দেশটি ন্যাটোর সদস্য হতে চায়। বিষয়টি মানতে নারাজ রাশিয়া। এ কারণে রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে এমন নিশ্চয়তা চায় যে ইউক্রেনকে কখনো ন্যাটোর সদস্য করা হবে না।
রাশিয়ার চাওয়া অনুযায়ী, এ ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিতে রাজি নয় পশ্চিমা দেশগুলো। পুতিন মনে করেন, রাশিয়াকে চারদিক থেকে ঘিরে পশ্চিমা দেশগুলো ন্যাটোকে ব্যবহার করছে। ইউক্রেনকেও এ উদ্দেশ্যে ন্যাটোতে নেওয়া হতে পারে। এ কারণে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরোধিতা করছেন তিনি।
রাশিয়ার অভিযোগ, গত শতকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে পূর্ব দিকে সম্প্রসারণ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি রাখা হয়নি।
রাশিয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত না করার যে দাবি মস্কো জানাচ্ছে, তা নাকচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ন্যাটো বলছে, এটি একটি আত্মরক্ষামূলক সামরিক জোট। প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষার পথ বেছে নেওয়ার অধিকার আছে।
১৯৯০-এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। এ ভাঙনকে রাশিয়ার জন্য একটি ভূরাজনৈতিক বিপর্যয় বলে মনে করেন পুতিন। তারপর থেকে রাশিয়া দেখছে, সামরিক জোট ন্যাটো ধীরে ধীরে তাদের ঘিরে ফেলছে। সংগত কারণেই রাশিয়া তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
১৯৯৯ সালে চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়। ২০০৪ সালে যোগ দেয় বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়া। ২০০৯ সালে যোগ দেয় আলবেনিয়া।
জর্জিয়া, মলদোভা বা ইউক্রেনেরও ন্যাটোতে যোগ দেওয়া আকাঙ্ক্ষা আছে। কিন্তু রাশিয়ার কারণে এখন পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। তবে এই তিন দেশে রুশপন্থী বিদ্রোহী আছে। এই দেশগুলোর কোনোটি যদি ন্যাটোতে যোগ দেয়, তবে তা রাশিয়ার জন্য মেনে নেওয়া কঠিন হবে।
বিএসডি/ এফএস