নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লায় ৬ বছরেও কলেজছাত্রী এবং নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার খুনি শনাক্ত কিংবা হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এর অন্তরালে রহস্য এখনো উন্মোচন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তনুর পরিবারের অভিযোগ- চারটি তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন আর পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় মামলাটি তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি।
এদিকে রোববার তনুর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তনুর স্বজনরা জানান, সর্বশেষ ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলা পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সদর দপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান ওই বছর ১৫ নভেম্বর তনুর বাবা ইয়ার হোসেনকে নিয়ে ঘটনাস্থল, তনুদের পুরনো বাসা পরিদর্শন করেন। এর দুই দিন পর ১৭ ডিসেম্বর তনুর বাবার সঙ্গে আবারো দেখা করেন পিবিআই সদস্যরা। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত তারা কুমিল্লা সেনানিবাসে অবস্থান করে ঢাকায় ফিরে যান। এরপর গত বছরের শুরুতে আরেক দফা ক্যান্টনমেন্টে আসেন পিবিআই সদস্যরা।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার পর ভেবেছিলাম হত্যার বিচার পাব। কিন্তু এখনো খুনিরাই শনাক্ত হলো না। খুনিদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচার হোক এটাই আমার প্রত্যাশা। খুনিদের বিচার না হলে মরেও শান্তি পাব না।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, বারবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি আমাদের চোখে পড়ছে না। আর কতদিন মেয়ের খুনের বিচারের জন্য কাঁদবো জানি না। কতবার কত স্থানে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি, তার হিসেব নেই। তনুর মৃত্যুবার্ষিকী এলেই সাংবাদিকরা খোঁজখবর নেয়। এছাড়া আর কেউ খবর নেয় না।
এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের পূর্বের তদন্ত সংস্থা সিআইডি মামলাটির বেশ ভালো তদন্ত করেছে, তারা সন্দেহভাজন কয়েকজনের ডিএনএ পরীক্ষা করিয়েছে। কিন্তু খুনি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। তাদের তালিকায় আরও কয়েকজন ছিল। তবে আমরা এখনো তাদের নমুনা না পাওয়ায় ডিএনএ পরীক্ষা করাতে পারিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কলেজছাত্রী এবং নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। সেনানিবাসের ভেতরে একটি স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তনু। হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় ৩০০ গজ দূরে আরেকটি স্টাফ কোয়ার্টারে ছাত্র পড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ওই দিনই অজ্ঞাতদের আসামি করে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তনুর বাবা।
মামলার তদন্ত ভার পুলিশ, ডিবি হয়ে সিআইডির হাতে যায়। আলামত সংগ্রহের পর সিআইডি জানায়, হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। পরে আদালতের নির্দেশে একই বছরের ৩০ মার্চ তনুর লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। দুই দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ খুঁজে না পাওয়ার তথ্য জানায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। এছাড়া তনুর মায়ের সন্দেহ করা তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে ওই সময়ে তাদের নাম গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।
বিএসডি/ এলএল