খেলাধূলা প্রতিনিধি:
ঢাকায় হাসপাতালের বিছানায় কাতড়াচ্ছেন সাকিব আল হাসানের মা, শাশুড়ি এবং তিন সন্তান। জাতীয় দলের ডিউটিতে দেশসেরা অলরাউন্ডার আছেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। হাজার মাইল পেরিয়েও কপালে চিন্তার রেখাটা একই। তাইতো পরিবারের পাশে থাকতে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন সাকিব, টিকিটও কেটেছিলেন। তবে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতিহাসগড়া জয়ের নায়ক মনস্থির করলেন নতুন ইতিহাস গড়ার। অন্তত ওয়ানডে সিরিজটি খেলে তবেই দেশে ফিরতে চান সাকিব, বলে জানিয়েছে বিসিবি।
বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিবের মা শিরিন আক্তার আগে থেকেই হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কিছু দিন আগে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে বিপিএলের সময় সন্তানদের নিয়ে দেশে আসেন সাকিবের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির। সম্প্রতি সাকিবের তিন সন্তানও এখন এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন। একমাত্র ছেলে আইজাহ আল হাসান ও মেঝো মেয়ে ইরাম হাসান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এবং বড় মেয়ে আলাইনা হাসান ভুগছেন ঠাণ্ডা জ্বরে। সাকিবের শাশুড়ির চিকিৎসা চলছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। তিনি ক্যান্সারে ভুগছেন। এখন পরিবার যে অবস্থায় আছে তাতে খেলা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন ভালো করেই বুঝতে পারছেন দলের সঙ্গে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার।
ইচ্ছে করলে পরিবারের পাশে থাকতে দেশে ফিরে যেতে সাকিবকে অনুমতিও দিয়েছিল বিসিবি। তবে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন জানান, টিকিট কেটেও তা বাতিল করেছে সাকিব, থাকছেন দলের সঙ্গেই, খেলবেন তৃতীয় ওয়ানডে। আপাতত ঢাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, প্রয়োজন মনে করলে পরে দেশে ফিরতে হতে পারে দেশের সবচাইতে সবড় এই ক্রিকেট তারকাকে।
দিনভর নানান খবরে টালমাটাল দেশের গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিয়ে পরিস্কার ধারণা দিতে গতকাল কথা বলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস। জানান, সাকিব যে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড তার পাশে থাকবে, ‘আপনারা জানেন, ওর পরিবারের একটা সঙ্কটময় সময় কাটছে। এদিকে পরিবারের এই অবস্থা, ওই দিকে (বাংলাদেশের) খেলা চলছে। ও বুঝে উঠতে পারছে না কী করবে। মানসিকভাবে খুব স্ট্রেস যাচ্ছে তার। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তৃতীয় ওয়ানডে খেলে আসবে। যদি না এখানে খুব গুরুতর কিছু হয়ে যায়। পরিস্থিতি এমন হতেও পারে, ওকে (আগেই) এখানে আসতে হতে পারে। তেমন পরিস্থিতি না হলে, তৃতীয় ওয়ানডেতে অবশ্যই সে খেলবে। অবশ্যই সাকিব যে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড তার পাশে থাকবে। সবার কাছে তার পরিবার আগে।’
পরিবারের এমন সঙ্কটকালে বিসিবির সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো সুযোগ দেখেন না জালাল। তিনি জানান, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারই। সেদিক থেকে সাকিব যে সিদ্ধান্তই নেবেন, তাতে পাশে পাবেন বিসিবিকে, ‘এখানে (বিসিবির) সিদ্ধান্তের কিছু নেই। এখানে কারো কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে সাকিবই সিদ্ধান্ত নেবে। পরিস্থিতির কারণে সে বাধ্য হলে চলে আসবে। এমন পরিস্থিতি যদি থাকে তাহলে অবশ্যই টেস্টে ওর খেলা নিয়ে সংশয় থাকবে। সব কিছু নির্ভর করছে, এখানে তার পরিবারের এই সঙ্কটময় পরিস্থিতির উপর। সেটা কোন দিকে যাচ্ছে এর উপর নির্ভর করে হয়তো সে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
মানসিক ও শারীরিক অবসাদের জন্য খেলা উপভোগ করছেন না বলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চাননি সাকিব। তবে কয়েক দিনের নাটকীয়তার পর সিদ্ধান্ত পাল্টে শেষ পর্যন্ত খেলার সিদ্ধান্ত নেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দেশের প্রথম জয়ে হন ম্যাচ সেরা। আগামীকাল সেই সেঞ্চুরিয়নেই তৃতীয় ওয়ানডেতে নামবে বাংলাদেশ দল। প্রথম ম্যাচে একই ভেন্যুতে ৬৬ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন সাকিবই। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য তিনি রান পাননি, হেরেছে দলও। শেষ ওয়ানডেতে হবে সিরিজের ফায়সালা। ৩১ মার্চ থেকে শুরু হবে টেস্ট সিরিজ। ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় টেস্ট। টেস্টে সাকিবকে পাওয়া যাবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। সবই নির্ভর করছে তার পারিবারিক পরিস্থিতির উপর।
বিএসডি/ এমআর