নিজস্ব প্রতিবেদক:
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. গোলাম মোস্তফা (৬০), মো. জালাল বাশার (৫৪), মো. মুসলিম উদ্দিন (৬৫), মো. মিনারুল ইসলাম ওরফে মিন্নি (২২) ও মো. তারেক মৃধা (২১)। গতকাল সোমবার রাজধানীর মালিবাগ, বাসাবো, শাহজাহানপুর ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে র্যাব–৩।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে দুটি কম্পিউটার, ২ হাজার ৪৬০টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের জাল সনদ প্রাপ্তিস্বীকার রসিদ, ২৬টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ১টি ল্যাপটপ, ১টি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৮টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০টি সাদা রঙের প্লাস্টিকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির কার্ড, ৫০টি স্বচ্ছ কার্ড হোল্ডার, ২টি রিল সিকিউরিটি লেমিনেটিং পেপার, যা দিয়ে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়, একটি কার্ড প্রিন্টার, চারটি সফটওয়্যার সিডি, চারটি পেনড্রাইভ, পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং নগদ ২৮ হাজার টাকা জব্দ করেছে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, এই চক্রের প্রধান গোলাম মোস্তফা। একই ধরনের প্রতারণায় তাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। তিনি জেলেও ছিলেন কয়েকবার। উচ্চমাধ্যমিক পাস গোলাম মোস্তফা প্রায় ৩০ বছর আগে ঢাকায় আসেন। প্রথমে এক্স–রে মেশিনের টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। পরে নিজেই ছোটখাটো একটা দোকান দিয়েছিলেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি প্রতারণায় জড়ান। গোলাম মোস্তফার বেশ কয়েকটি লেগুনা গাড়ি আছে।
এই দলের বাকি সদস্যদের মধ্যে মিনারুল টেক্সটাইল ডিপ্লোমা পাস করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্সে গ্রাফিকস ও অন্যান্য নকশার কাজ করতেন। মুসলিম আগে লেগুনার চালক ছিলেন। ৮-১০ বছর যাবৎ তিনি পুরোনো মোটরসাইকেল কেনাবেচাসহ বিআরটিএ ও নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে লোকজনকে সংগ্রহ, যোগাযোগ ও কার্ড তৈরির পর সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতারণার কাজ করতেন। জালাল প্রথমে প্রেসে কাজ করতেন। পরে আদালতের সামনে দালালি করতে শুরু করেন। তিনিও এই চক্রের সঙ্গে পাঁচ–সাত বছর ধরে জড়িত। তারেক বছরখানেক এই প্রতারণায় জড়িয়েছেন।
র্যাব বলছে, এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন নির্বাচন অফিস ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিসের সামনে অবস্থান করে গ্রাহকদের নিশানা করত। যাঁরা মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি চালান কিন্তু লাইসেন্স নেই—এমন লোকজনই ছিল তাদের প্রথম পছন্দ। তারা তাঁদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিত। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে তারা প্রাপ্তিস্বীকারপত্র ও মানি রিসিটে বিআরটিএ ও বিভিন্ন ব্যাংকের ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহককে দিত। গ্রাহকের সঙ্গে দেখাও করত নির্বাচন কমিশন অফিস কিংবা বিআরটিএর সামনে।
একইভাবে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে চটকদার বিজ্ঞাপন পোস্ট করত। কোনো গ্রাহক তাদের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করলে তারা নানা রকম লোভ দেখাত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার ক্ষেত্রে তারা ভুয়া আইডি ব্যবহার করত।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দ্রুত এনআইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে ক্ষেত্রবিশেষে ৮-১০ হাজার টাকা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইয়ে দিতে ৩–৪ হাজার টাকা দাবি করত। এই জাল সনদ দিতে তারা সময় নিত তিন থেকে সাত দিন। জরুরি প্রয়োজনে এক দিনের মধ্যে দেওয়ারও নজির আছে। গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি অর্থ নিত চক্রটি।
বিএসডি/ এমআর