নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর বিরুদ্ধে জাতিসংঘে আনা প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোট না দিলেও, দ্বিতীয় প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদে এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, বন্ধুপ্রতীম দেশ হওয়ায় শুধুমাত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় প্রস্তাবে মানবতার বিষয় থাকায় বাংলাদেশ ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর মার্চ মাসের শুরুতে রাশিয়াকে আক্রমণ বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল। সেই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল ১৪১ দেশ, বাংলাদেশসহ ৩৫টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল।
তবে গত ২৪ মার্চ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকটের অবসানে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রমের সুযোগ দিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা নাই, সেখানে কোন বিষয় নাই। একটা দেশের বিরুদ্ধে ভোট, সেটা হলো রাশিয়া। তখন আমি বললাম, না, এখানে তো আমরা ভোট দেবো না। কারণ যুদ্ধ তো একা একা বাধে না। উস্কানি তো কেউ না কেউ দিচ্ছে। দিয়ে টিয়ে তো বাঁধালো যুদ্ধটা। তাহলে একটা দেশকে কনডেম (নিন্দা) করা হবে কেন? সেই জন্য আমরা ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে রাশিয়ার অবদানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে দেশের এই অবস্থান তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
সেই প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, কারণ রাশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা যখন সেভেন্থ ফ্লিট পাঠায় পাকিস্তানের পক্ষে, রাশিয়া তখন আমাদের পাশে দাঁড়ায়। কাজেই যারা দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা নিশ্চয়ই তাদের পাশে থাকবো। কিন্তু তারা যদি কোন অন্যায় করে, সেটা আমরা মানবো না। আর আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যুদ্ধটা বাঁধালো কারা, উস্কানিটা কারা দিলো, সেটাও তো আপনাদের দেখতে হবে। সেজন্য আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, যেহেতু এটা শুধু একটা দেশের পক্ষে, আমরা ভোট দেবো না।
দ্বিতীয় প্রস্তাবের প্রসঙ্গ ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ভোট দেওয়ার এখন যে প্রস্তাবটা এসেছে, এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই কষ্ট পাচ্ছে, সেখানে মানবাধিকারের বিষয়টি ছিল।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে যেহেতু মানবাধিকারের বিষয়টি রয়েছে, সেজন্য আমরা ভোট দিয়েছি। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যখন একটি দেশের বিরুদ্ধে প্রস্তাব- আমরা ভোট দিইনি। যখন মানবতার বিষয়টি সামনে এসেছে, আমরা ভোট দিয়েছি। আমার মনে হয় এটা একেবারে স্পষ্ট। এটা নিয়ে আর কারও কোনও দ্বিধা থাকা উচিত নয়।
বিএসডি/ এমআর