খেলাধূলা প্রতিনিধি:
চোটের হানায় পেস আক্রমণের শক্তি কমে গেছে আগেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে এবার সেরা স্পিন আক্রমণ পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় বাংলাদেশ দল। মেহেদী হাসান মিরাজের চোট পাওয়া আঙুলে চিড় ধরা পড়েছে। আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন তিনি। এরপর আঙুলের অবস্থা বুঝে নেওয়া হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট চট্টগ্রামে আগামী ১৫ মে থেকে। দুই সপ্তাহ পরও তাই সময় কিছুটা থাকবে বাকি। তবে মিরাজের চোটের যা অবস্থা, প্রথম টেস্টে তাকে পাওয়ার সম্ভাবনা সামান্যই। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিস চৌধুরি জানালেন, এখনই তারা চূড়ান্ত কিছু বলতে চান না মিরাজকে নিয়ে, ‘মিরাজের ডান হাতে কনিষ্ঠার হাড় নড়ে গেছে, চিড়ও ধরেছে।
নড়ে যাওয়া হাড় আমরা ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিয়েছি। চিড়টাকে মেডিকেলের ভাষায় বলে অ্যাভালশ ফ্র্যাকচার, লিগামেন্টের সংযুক্ত কিছু হাড় উঠে এসেছে। আপাতত আমরা ওকে দুই সপ্তাহের বিশ্রাম দিয়েছি। এই সময়টায় চাইলে শুধু পায়ের এক্সারসাইজ করতে পারবে। দুই সপ্তাহ পর আঙুলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখব আমরা। প্রথম টেস্ট খেলতে পারবে নাকি পারবে না, শঙ্কা-সম্ভাবনা, এসব তো মেডিকেলের ভাষায় আমরা বলতে পারি না। সময় হলেই দেখা যাবে। দুই সপ্তাহ পরই কেবল বলতে পারব আমরা।’
মিরাজের নিজের কণ্ঠে অবশ্য অনিশ্চয়তার সুর। প্রথম টেস্ট খেলার আশা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন বলেই মনে হলো, ‘আঙুলে ফ্র্যাকচার ধরা পড়েছে। খারাপ লাগছে খুব। প্রথম টেস্ট খেলতে পারব কিনা কে জানে। সম্ভাবনা কমই মনে হচ্ছে। বলটা হাতে লাগার সময়ই বুঝেছিলাম, খুব বাজে কিছু হচ্ছে। বেকায়দায় পড়েছিল, প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। এখন আবার অপেক্ষা শুরু, কখন ঠিক হয়।’ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে রোববার বিকেএসপিতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলার সময় প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের তামিম ইকবালের ক্যাচ নিতে গিয়ে এই চোটে পড়েন মিরাজ। শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারলে বাংলাদেশের জন্য তা হবে বড় এক ধাক্কা।
চোটের কারণে এই টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ। আরেক পেসার শরিফুল ইসলামকে পাওয়া নিয়েও শঙ্কা আছে তার অসুস্থতার কারণে। তবে মিরাজ না খেললে তা হবে বাংলাদেশের সম্ভাবনায় সবচেয়ে বড় আঘাত। বল হাতে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে আছেন মিরাজ। লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট হাতে ক্রমেই হয়ে উঠছেন নির্ভরযোগ্য, অবদান রাখছেন নিয়মিতই।
এদিকে, বছর দুয়েক আগেও আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী ছিলেন টেস্ট দলের প্রথম পছন্দের পেসার। দেশের একমাত্র টেস্ট বিশেষজ্ঞ পেসারও মনে করা হতো তাকে।
সময়ের প্রক্রিমায় এখন ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতেই কাতর অপেক্ষায় থাকতে হয় তাকে। আবু জায়েদ চৌধুরির শক্তির জায়গা দুই দিকেই সুইং করানোর ক্ষমতা। ঘাটতির জায়গা তার গতির স্বল্পতা। আর তাতে এই বছর নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনেও স্কোয়াডে থেকে ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তার। এবার দেশের মাঠে লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের স্কোয়াডেই জায়গা পেলেন না সিলেটের এই পেসার।
আসন্ন শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে সিরিজের জন্য নির্বাচকদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে গতি। রাহীর নাম কাটা গেছে সেখানেই। এমনিতেই টেস্ট বিমুখ মুস্তাফিজুর রহমান। চোটের কারণে ছিটকে গেছেন আরেক তারকা পেসার তাসকিন আহমেদ। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চোট নিয়ে ফেরা শরিফুল ইসলামও খেলা নিয়ে আছেন শঙ্কায়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ ভঙ্গুর। এরপরও রাহীকে বাদ দেওয়ার পেছনের কারণটা স্পষ্ট নয়। গতির কারণে রাহীর বাদ পড়ার দিনেই সুখবর পেয়েছেন সিলেটের আরেক পেসার রেজাউর রহমান রাজা। রাহীকে বাদ দিয়ে রাজাকে নেওয়া কারণ ব্যাখ্যা করলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, ‘রাহির (আবু জায়েদ) ব্যাপারটা হোম কন্ডিশনে খেলা, যেহেতু ‘এক্সেস সুইং’ যখন দরকার হয়, তখন ওকে নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করি। রাজা (রেজাউর) এইচপি ট্রেনিংয়ে যথেস্ট উন্নতি করেছে।
আর কিছু ম্যাচে দেখলাম বেশ ভালো গতিতে বল করছে। পেসের ভ্যারিয়েশনের জন্য এই জায়গাটায় একটু বদল এনেছি।’
রেজাউরের গতিও অবশ্য খুব বেশি নয়। তবে একটু স্কিড করে তার বল। বাড়তি বাউন্স করানোর সামর্থ্যও তার আছে। আবু জায়েদের গতি রেজাউরের চেয়ে কম। তবে স্কিল দিয়ে সেই ঘাটতি তিনি ভালোই পুষিয়ে দিচ্ছিলেন। সাফল্যও পাচ্ছিলেন টেস্ট আঙিনায়। ততে হুট করেই বিবর্ণ হয়ে পড়েন গত কয়েকটি টেস্টে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাঠেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন আবু জায়েদ। এরপর থেকেই তার খারাপ সময়ের শুরু। গত বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্টে উইকেট পাননি একটিও। জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে জায়গা পাননি একমাত্র টেস্টের একাদশে। নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টেও ছিলেন উইকেটশূন্য। এরপর আর সুযোগ পাননি খেলার। এবার বাদ পড়লেন না খেলেই। তবে আবু জায়েদের জন্য দুয়ার এখনই রুদ্ধ করে দিচ্ছেন না নির্বাচকরা। বাংলাদেশে টেস্ট সিরিজের আগে একটি দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কা।
সেই ম্যাচে আবু জায়েদকে সুযোগ দেওয়া হবে। পারফর্ম করলে তার সামনে সুযোগ থাকবে বলে জানালেন প্রধান নির্বাচক, ‘রাহিকে বিবেচনার ক্ষেত্রে দেখুন কিছু কিছু পদক্ষেপ আছে, দলের কম্বিনেশন তৈরি করতে হয়। সে তো গত সিরিজেও দলে ছিল, তবে নিয়মিত হতে পারছে না। যেহেতু দেশের মাঠে খেলা, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছি আমরা দেশের খেলা হলে আমাদের অন্য একটা পরিকল্পনায় খেলা হয়, তাই ওকে বাইরে রাখা হয়েছে। তবে প্রস্তুতি ম্যাচের দলে আছে সে। অনেকদিন তো খেলার মধ্যে নেই, এখানে ওকে দেখা যাবে কেমন বোলিং করে।’
আগামী ৮ মে বাংলাদেশ সফরে আসবে দিমুথ করুনারত্নের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা দল। বিকেএসপিতে ১০ ও ১১ মে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে প্রথম টেস্টের ভেন্যু চট্টগ্রামে যাবে শ্রীলঙ্কা। ১৫ মে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট খেলে ২৩ মে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলবে সিরিজের শেষ টেস্ট। দুটি ম্যাচই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ।
বিএসডি/ এমআর