খেলাধূলা প্রতিনিধি:
বারবার রং পাল্টানো ম্যাচের শেষ ওভারের প্রথম ৩ বল থেকে এলো ৯ রান। শেষ ৩ বলে সমীকরণ দাঁড়াল ৮ রান। মহাগুরুত্বপূর্ণ সেই সময়ে দেখা গেল অন্য এক উমরান মালিককে। এতক্ষণ অকাতরে রান বিলানো গতিময় পেসার মাথা খাটিয়ে বোলিং করে দিলেন কেবল ৩ রান। নখকামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের জন্য শেষটা হলো হতাশার। অবিশ্বাস্য এক জয়ের আশা জাগিয়েও ভারতের বিপক্ষে পারল না তারা।
ম্যালাহাইডে দা ভিলেজে মঙ্গলবার (২৮ জুন) দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৪ রানে জিতেছে ভারত। দুই ম্যাচের সিরিজ জিতেছে ২-০ ব্যবধানে। দিপক হুডার প্রথম সেঞ্চুরি ও সাঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে তার বিশ্ব রেকর্ড গড়া জুটির সৌজন্যে ৭ উইকেটে ২২৫ রান করে ভারত। ব্যাটসম্যানদের মিলিত অবদানে ৫ উইকেটে ২২১ পর্যন্ত যায় আয়ারল্যান্ড।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের প্রথম বলেই স্যামসনের বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করে ভারত। তৃতীয় ওভারে ইশান কিষান ফিরে গেলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। পঞ্চম ওভারে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন হুডা, সে সময় তার রান ছিল ১৪। এরপর বোলারদের উপর চড়াও হন তিনি। পিছিয়ে থাকেননি স্যামসনও। পাওয়ার প্লেতে ইশানের উইকেট হারিয়ে ভারত তোলে ৫৪ রান। এরপর কমতে বসে রানের গতি। ব্যক্তিগত ৩৩ রানে পল স্টার্লিংয়ের হাতে জীবন পান হুডা। পরে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে দুই ছক্কায় উড়িয়ে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন তিনি, ২৭ বলে।
ক্যারিয়ারের প্রথম পঞ্চাশের পর বোলারদের উপর আরও চড়াও হন তিনি। সে সময় খুব একটা স্ট্রাইক-ই পাচ্ছিলেন না স্যামসন। শেষ পর্যন্ত ত্রয়োদশ ওভারে তিনিও পা রাখেন পঞ্চাশে, ৩১ বলে। ২০১৫ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের পর দেশের হয়ে এটাই তার প্রথম পঞ্চাশ। ফিফটির পর ডেলানিকে টানা দুই ছক্কায় ওড়ান স্যামসন। পরে মার্ক অ্যাডায়ারকে ফ্লিক করে ওড়ান ছক্কায়। পরের বলেই বোল্ড হয়ে থামেন তিনি। ভাঙে ৮৭ বল স্থায়ী ১৭৬ রানের জুটি। ভারতের হয়ে যে কোনো উইকেটে এটি সর্বোচ্চ জুটি। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে দ্বিতীয় উইকেটে এটি সেরা। ৪ ছক্কা ও ৯ চারে স্যামসন ৪২ বলে করেন ৭৭।
রেকর্ড জুটির পর নিয়মিত উইকেট হারায় ভারত। এর মধ্যেই ৫৫ বলে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান হুডা। এরপর আর এগোতে পারেননি বেশিদূর। ভারতের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করে থামেন ১০৪ রানে। তার ৫৭ বলের ইনিংস গড়া ৬ ছক্কা ও ৯ চারে। শেষ দিকে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ পান দিনেশ কার্তিক, আকসার প্যাটেল ও হার্শাল প্যাটেল। ৯ বলে দুই চারে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া।
পাহাড় ডিঙানোর চ্যালেঞ্জে ভুবনেশ্বর কুমারের প্রথম দুই বল ডট খেলার পর ছক্কা ও তিন চার হাঁকিয়ে ডানা মেলেন স্টার্লিং। ১৮ রানের ওভার দিয়ে শুরু হয় আয়ারল্যান্ডের রান তাড়ার অভিযান। অন্য প্রান্তে তাকে সঙ্গ দিয়ে যান অ্যান্ডি বালবার্নি। ৪ ওভারেই জুটি ও দলের রান ছুঁয়ে ফেলে পঞ্চাশ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে ছক্কা হজম করেন রবি বিষ্ণইও। পরে তিনিই ভাঙেন আইরিশদের শুরুর জুটি। চমৎকার এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন স্টার্লিংকে। ১৯ বলে তিন ছক্কা ও পাঁচ চরে ৪০ রান করেন বিস্ফোরক এই ওপেনার। তার বিদায়ে ভাঙে ৩৫ বল স্থায়ী ৭২ রানের জুটি। এরপর হার্দিক পান্ডিয়ার সরাসরি থ্রোয়ে শূন্যতে ডেলানি রান আউট হয়ে ফেরেন। পরের বলেই উমরানকে ছক্কায় ওড়ান বালবার্নি। পরের ওভারে গতিময় পেসারকে ছক্কা মারার পর হাঁকান চার। ইনিংসে এটাই তার প্রথম চার, ততক্ষণে ছক্কা হয়ে গেছে ছয়টি।
৯ ওভারেই তিন অঙ্ক স্পর্শ করে আয়ারল্যান্ডের রান। মূলত বাউন্ডারিতে এগোনো বালবার্নি পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৩৪ বলে, সিঙ্গেল নিয়ে। পরের ওভারে হার্শালকে চারের পর মারেন ছক্কা। পরের বলেই অবশ্য ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক। ৩৭ বলে সাত ছক্কা ও তিন চারে তিনি করেন ৬০ রান। তখনও স্বাগতিকদের প্রয়োজন ৫৭ বলে ১০৯ রান। আগের ম্যাচে ঝড় তোলা হ্যারি টেক্টর তখনও শান্ত। প্রথম ১০ বলে তিনি করেন ১০ রান। এরপর তিন বলের মধ্যে বিষ্ণইকে দুটি চার মেরে মনোযোগ দেন রানের গতি বাড়ানোয়। নিজের তৃতীয় ওভারে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের স্বাদ পান উমরান। গতিময় এই পেসার বিদায় করেন লর্কান টাকারকে।
ছক্কায় রানের খাতা খোলার পর তিন বলের মধ্যে বিষ্ণইকে দুই চার মেরে আয়ারল্যান্ডকে কক্ষপথে রাখেন জর্জ ডকরেল। পরে হার্শালকে দুটি ছক্কায় উড়িয়ে লক্ষ্যটা আরও কাছে নিয়ে আসেন তিনি। শেষ ৩ ওভারে আইরিশদের প্রয়োজন ছিল ৩৮ রান। ১৮তম ওভারে টেক্টরকে ফিরিয়ে ২১ বল স্থায়ী ৪৭ রানের জুটি ভাঙেন ভুবনেশ্বর। তাকে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন টেক্টর। পাঁচ চারে তিনি ২৮ বলে করেন ৩৯। সেই ওভারে শেষ বলে চার মেরে একটু হলেও আশা বাঁচিয়ে রাখেন ডকরেল।
রান উৎসবের ম্যাচে শেষ ২ ওভারে ৩১ রান অসম্ভব কিছু তো নয়। ১৯তম ওভারে হার্শালকে চারের পর ছক্কায় ওড়ান অ্যাডায়ার। উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আয়ারল্যান্ডের আশা। ওভার থেকে আসে ১৪ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। উমরানের ‘নো’ বল আর অ্যাডায়ারের দুই বাউন্ডারির সুবাদে প্রথম ৩ বলে আসে ৯ রান। এরপরের কাজটা খুব অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু উমরানের মাথা খাটিয়ে বোলিংয়ে আর পেরে ওঠেনি আয়ারল্যান্ড।
বিএসডি/ এমআর