জাককানইবি প্রতিনিধি:
জাতীয় কবির নামে ময়মনসিংহের নামাপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত l জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পেরিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে শিক্ষা সম্প্রসারণে আধুনিক, বাস্তবসম্মত,বিজ্ঞানভিত্তিক ও কর্মমূখী শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন-এই তিন উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে বর্তমান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারী সহ বিভিন্ন সংকট কাটিয়ে বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদচারণায় মুখর থাকে ক্যাম্পাস। ফলে যুগের সাথে তাল মেলাতে, ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক শিক্ষার পরিবেশ দিতে, আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যপক প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
আর সেসব প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক মাত্রায় শুরু হয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন। বর্তমান প্রশাসনের নেতৃত্বে সেসব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ট উপাচার্য হিসেবে যোগদানের স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের নির্দেশনায় কাজে এসেছে পরিবর্তন ও গতির সঞ্চার।
সকল ধরনের বাঁধা উপেক্ষা করে চলছে নিমার্ণকাজ। রাতদিন নির্মাণ শ্রমিকদের কর্মব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে ভবনগুলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান,বিগত সময়ের চেয়ে চলতি বছরে ক্যাম্পাসে সকল ধরনের কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সবার সবার একটাই কথা টাকা গুলো যেনো সঠিক পন্থায় ব্যায় হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের চাহিদা মেটাতে বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বিশেষ সুনজর দেন। ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৮৪০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সেই প্রকল্প থেকেই বর্তমান সময়ে ক্যাম্পাসে চলছে উন্নয়নের সুবিশাল কর্মযজ্ঞ। ক্যাম্পাসের যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ চলমান। সাত-আটটি সাইটে শ’খানেক শ্রমিক প্রতিদিন নিরলস কাজ করে চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ১৩ টি ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান আছে, আরও ৬টি ভবন নির্মাণ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
নির্মাণাধীন ভবনগুলোর উল্লেখযোগ্য হলো- ২,৯৩২ বর্গমিটার আয়তনে ২য় প্রশাসনিক ভবন, ৯,৯৬০ বর্গমিটার আয়তনের ১০ তলা ভবন যেখানে পাঁচটি ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণি কক্ষ এবং আইটি স্পেস থাকবে, ৮২১ বর্গমিটার আয়তনের ৫ তলা অতিথি ভবন নির্মাণ, ৪২,২৯৫ বর্গমিটার আয়তনের ১০ তলা একাডেমিক ভবন, ৫,৩৩৬ বর্গমিটার আয়তনের স্কুল ও কলেজ ভবন নির্মাণ (নার্সারী হতে দ্বাদশ পর্যন্ত), ১৩,৪৯৮ বর্গমিটার আয়তনের শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য ১০ তলা ইউটিলিটি ভবন নির্মাণ, ৬,৩৪৭ বর্গমিটার আয়তনের শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য ১০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, ১৫৭৩ বর্গমিটার আয়তনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ৬ তলা আবাস ভবন নির্মাণ, ৭,৮১১ বর্গমিটার আয়তনের ৩ তলা মাল্টিপারপাস হল কাম টি.এস.সি কাম জিমনেসিয়াম ভবন নির্মাণ, ১,০১৯ বর্গমিটার আয়তনের চিকিৎসা কেন্দ্রের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ (অফিস, হাসপাতাল ও আবাসিক সুবিধা সম্বলিত), ২,২৫২ বর্গমিটার আয়তনের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ ৩ তলা মসজিদ নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান ভবনগুলো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ভীষণ আশাবাদী। তাদের মতে, এসব ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে খুব দ্রুতই ক্যাম্পাসের বিদম্যান সমস্যাগুলো অনেকাংশে লাঘব হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে একটি সুষ্ঠু ও নির্মল শিক্ষা-আবাসিক পরিবেশ গড়ে উঠবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, মাননীয় উপাচার্য স্যারের নির্দেশ মেতাবেক আমরা খুব তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসকে একটি আধুনিক ও স্মার্ট ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর সেজন্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। চলমান কাজগুলোকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে করোনা মহামারী কিংবা বর্ষাকালের প্রতিক‚লতা কোনকিছুই আমাদের কাজকে বাঁধাগ্রস্থ করেনি।
সার্বিক বিষয় নিয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমাদের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নের যে মটো তার খুবই পরিপূরক। কারণ আমাদের এই ক্যাম্পাসকে শিক্ষা বান্ধব করতে গেলে এখানে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ক্যাম্পাসকে ছাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে মুখর রাখতে গেলে ২৪ ঘন্টাই তাদের পদচারণা রাখতে গেলে এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই জরুরী।
উল্লেখ্য;মাত্র ৫ একর আয়তন দিয়ে শুরু ক্যাম্পাসের পরিসর বর্তমানে ৫৭ একর। ৬টি অনুষদের অধীনে ২৪টি বিভাগ আছে। নজরুল গবেষণাকে নতুনমাত্রা দিতে প্রতিষ্ঠা হয়েছে ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ। নজরুল প্রাঙ্গণ মুখর থাকে ৮ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থীর পদচারণায়। আরও কর্মরত আছেন ২০৫ জন শিক্ষা, ১৩৯ জন কর্মকর্তা, ১৯৪ জন কর্মচারী। শিক্ষার্থীদের আবাসনে রয়েছে ৪টি আবাসিক হল। এগুলো হলো- অগ্নি-বীণা হল, দোলন-চাঁপা হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। প্রায় ৩ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী হলগুলোতে অবস্থান করতে পারেন। শিক্ষা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের জন্য রয়েছে ৪টি ভবন ও একটি ডরমেটরিা।
বিএসডি/ফয়সাল