আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মহররম মাস শুরুর মুহূর্তে পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ পরিবর্তন করা হয়েছে। হিজরি নববর্ষকে স্মরণীয় করতে এবারই প্রথম ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। শনিবার (৩০ জুলাই) থেকে সৌদি আরবে হিজরি নববর্ষের মহররম মাস শুরু হয়। তাই শুক্রবার (২৯ জুলাই) দিবাগত রাতে কাবাঘরে মোড়ানো হয় নতুন গিলাফ।
বছরে একবার কাবাঘরে নতুন গিলাফ মোড়ানো একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। ৯ জিলহজ আরাফা প্রাঙ্গণে হাজিরা চলে গেলে যখন কাবা প্রাঙ্গণ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে, তখন কাবার গিলাফ পরিবর্তনের রীতি চলে আসছিল। কিন্তু এবার ১৪৪৪ হিজরি সনের প্রথম মুহূর্তে ঐতিহাসিক এই আয়োজনের কথা জানান পবিত্র দুই মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগের শায়খ ড. আবদুর রহমান আল সুদাইস। সৌদি বাদশাহর রাজকীয় নির্দেশনায় তা পরিবর্তন করা হয় বলে জানান তিনি।
প্রতিবছরের নতুন গিলাফ তৈরির জন্য রয়েছে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। মক্কার উম্মুল জাওদে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা’স কিসওয়াহ’। এখানে কর্মরত দুই শ কর্মকর্তা কাবার গিলাফ পরিবর্তনের কাজটি সম্পন্ন করেন।
১৩৪১ মোতাবেক ১৯৬২ সালে সৌদির প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমান আলে সৌদ গিলাফ তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের নির্দেশ দেন। ১৩৯৭ মোতাবেক ১৯৯৭ সালে গিলাফ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ২০১৭ সালে বাদশাহ সালমানের নির্দেশনায় এর নাম দেওয়া হয় ‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা’স কিসওয়া’। পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ তৈরির প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে দুই দশক ধরে কাজ করছেন বাংলাদেশের শায়খ মুখতার আলম।
মূলত ৪৭ টুকরা কাপড় দিয়ে গিলাফ তৈরি করা হয়। ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেলাই মেশিনে করা হয় এসব কাজ। কারুকার্যের অনেক কাজ হাতেও করা হয়। কাপড়ের ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি অংশ একত্রে সেলাই করা হয় এবং তামার রিং দিয়ে গোড়ায় স্থির করা হয়। ৬৭০ কেজি কাঁচা রেশম কালো রং করা হয়। ২১ ক্যারেটের ১২০ কেজি স্বর্ণ ও ১০০ কেজি রুপার সুতা দিয়ে সেই কাপড়ে লেখা হয় পবিত্র কোরআনের কারুকাজখচিত আয়াত। গিলাফের সব কাজ শেষ করতে ছয় থেকে আট মাস সময় লাগে। সব মিলিয়ে ৮৫০ কেজি ওজনের এই গিলাফ তৈরিতে ব্যয় হয় ২৫ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা সাড়ে ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই গিলাফকে বিশ্বের ব্যয়বহুল কাপড় বলে মনে করা হয়।
বিএসডি/ফয়সাল