নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে টানা পাঁচবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটে নির্বাচিত হয়েও লজ্জিত সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য তুফানশ্বরী রায়। এবার তিনি একবারের জন্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। গণমাধ্যমের মাধ্যমে মৃত্যুর আগে এটিই তার শেষ চাওয়া বলে দাবি করেছেন জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের এই নারী সদস্য। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কি বলতে চান তা খোলসা করেননি।
নারী সদস্য তুফানশ্বরী রায় বলেন, ‘জনগণ আমাকে বারবার নির্বাচিত করে ঠিকই, কিন্তু জনগণের কাঙ্ক্ষিত কোন প্রত্যাশা আমি তেমন পূরণ করতে পারি না। আমি নির্বাচন করতে চাই না জনগণ আমাকে নির্বাচনে বারবার অংশগ্রহণ করতে চাপ দেন। তাদের বিশ্বাস আমি তাদের সহায়ক হব। কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমি তাদের প্রত্যাশার চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিষদের বয়স যতদিন, ততদিন থেকেই আমি নির্বাচিত হয়ে সদস্যের আসনে রয়েছি। এখনো আমি শতভাগ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারিনি। আংশিক করেছি মাত্র। এর জন্য নিজের জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। তাতেও আমার দুঃখ নেই। তবে কিছু আক্ষেপ আমার রয়েছে যা আমি প্রধানমন্ত্রীকেই বলতে চাই।’
তিনি বলেন ‘আমি যেহেতু নারী, প্রধানমন্ত্রীও নারী। আমি আশা করি তিনি আমার কথাগুলো বুঝবেন। আমি মৃত্যুর আগে একবার তার সাথে দেখা করতে চাই। তিনি যেন একবার আমার কথা শোনেন।’
এই নারী ইউপি সদস্যের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার সাদামাটা জীবন যাপন করছেন তিনি। যে বাড়িটিতে তিনি থাকেন সেটিতে বর্ষার পানি বিছানায় গড়ায়। ঘর থেকে আকাশ দেখা যায়। একটি ভাঙ্গা চৌকিতে ঘুমান। ঘরের আড়া ও টিনের বেড়ার দেয়ালে সূর্যের আলোর রশ্মি থেকে রেহাই পেতে ব্যবহার করেন এক টুকরো চট।
স্থানীয় জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘সারাজীবন তিনি জনগণ-জনগণ করে জীবন পার করে দিচ্ছেন৷ নিজের সবটুকু দিয়ে জনগণকে আগলে ধরেছেন। যখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তখন প্রায় বলতে শুনি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন। কিছু একটা বলতে চান প্রধানমন্ত্রীকে যা আমরা কোনদিন জানতে পারিনি৷ আমরা সকলে চাই এমন সৎ একজন নারী নেত্রীর কাছে যাক। তার কি বলার আছে বলুক৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে পারলে আমরা সকলে অনেক খুশী হব।’
মহেষ চন্দ্র রায় বলেন, ‘তিনি এতটাই জনপ্রিয় যে তাকে ছাড়া মানুষ অন্য কাউকে চিন্তা করতে পারে না। তাই বারবার তাকে নির্বাচিত করেন। তবে প্রতিবার নির্বাচিত হয়ে তিনি লজ্জাবোধ করেন। তার ইচ্ছামত ও জনগণের চাহিদা মত কোনকিছুই তিনি করতে পারেন না৷ অনেকদিন ধরেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত করতে চাচ্ছেন৷ হয়তো একবার দেখা করলে নিজেকে সার্থক মনে করবেন। আরও অনুপ্রাণিত হবেন এই নারী সদস্য।’
সনেকা রায়, নারী সদস্য তুফানশ্বরীর ছেলের বৌ। তিনি বলেন, ‘বিয়ের ১৭ বছর ধরে দেখে আসছি তিনি জনগণকে নিয়ে কাজ করছেন। সকলের সমস্যা সমাধানে কাজ করেছেন। আশার শাশুড়ি মা এতটাই সৎ মনের মানুষ যে তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করা তার শেষ ইচ্ছে। আমি চাই তাকে একবার দেখা করার অনুমতি দিক আমাদের প্রধানমন্ত্রী।’
সূচনা রায় নামে একজন এবারে প্রথম ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেন। তিনি অনেকদিন যাবত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। এটি তার স্বপ্ন হতে পারে। আবার এটা সত্য যে তিনি পরিষদ থেকে যা বরাদ্দ পান তা দিয়ে এখানকার নারীদের শতভাগ উপকার করতে পারেন না৷ সেক্ষেত্রে যেহেতু আমরা তাকে ভরসা করি। নিশ্চয় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আমাদের নারী শক্তিকে নিয়ে কথা বলবেন। আমরা চাই তার এই একমাত্র আশা পূরণ হোক। প্রধানমন্ত্রী তার সাথে একবার হলেও কথা বলুক।’
বাচোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিতেন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘পাঁচবারের নির্বাচিত নারী ইউপি সদস্য তুফানশ্বরী রায় তিনটি ওয়ার্ডের জনগণের একটি আস্থার নাম। পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চান। তার সাথে প্রধানমন্ত্রী দেখা করলে সে অনুপ্রাণিত হবে।’