নরসিংদী প্রতিনিধি:
দেশের একজন মানুষও ভূমিহীন এবং গৃহহীন থাকবে না, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসন। নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান- এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কেবল গৃহহীন-ভূমিহীনই নয়, ঘর পাচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সদস্যরাও। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে উঠে এক সময়ের সুবিধা বঞ্চিত নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলার ৭০৬টি পরিবারের অসহায় মানুষগুলোর জীবন বদলে গেছে।
নতুন ঘর পাওয়া এসব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষগুলোর চোখে মুখে এখন অনাবিল স্বপ্ন। তারা এখন নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছেন। সমাজের অবহেলিত এই মানুষগুলোর একসময় ছিলোনা কোনো স্থায়ী ঠিকানা। কঁচুরিপানার মত ছিল তাদের জীবন। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে সরকারের খাস জমি কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ভাঙ্গা ঘরে থেকে রোদ বৃষ্টিতে ভিজে পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করতো তারা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে বাসস্থানসহ নানাবিধ সুবিধার ছুঁয়ায় আজ বদলে যাচ্ছে সমাজের অসহায় মানুষগুলোর জীবন মান। মুজিব জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে গৃহীত এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৭০৬টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মাণকরা এই ঘরগুলো বরাদ্ধ নিয়েছে স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, নদী ভাঙ্গনগ্রস্থ পরিবার, দিনমুজুর, শারীরিক অক্ষম ব্যক্তি ও অসহায় সহায় সম্ভলহীন বিক্ষুকরা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপরের এই নতুন সু-সজ্জিত ঘর হাঁসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে। নিরাপদ, মজবুত, সুন্দর একটি পাকা পরিচ্ছিন্ন নিজের স্থায়ী সেমিপাকা ঘরে থাকার স্বপ্ন পূরণ হয়েছেসমাজের অসহায় গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর।
সরেজমিনে দেখা গেছে মানবেতর জীবন যাপন থেকে মুক্তি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে তারা এখন অত্যন্ত সুঃখ স্বাচ্ছন্দে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের চরসুবুদ্ধি কান্দাপাড়া আবাসনে বসবাসরত খোরশেদা বেগম প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের একটি ঘর পেয়ে জীবনের গল্পটাই যেন বদলে গেছে। গত মঙ্গলবার সকালে এ প্রতিনিধির কাছে নিজের জীবন পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন ৬৫ বছর বয়সী এই নারী। শুধু খোরশেদাই নয় তারমত অনেকেরই আগের মত আর দুঃখ মাখা গল্প নেই জীবনে। জীবনের গতিপথ পরিবর্তীত হয়ে এখন সুখের ছায়া লেগেছে।
এই প্রকল্পের সরকারী ঘর বরাদ্ধ পেয়েছেন খোরশেদার মত আরো বিষটি পরিবার। যাদের পূর্বে কোনো ভিটেমাটি কিছুই ছিল না। বর্তমানে জায়গা সহ সরকারী ঘর পেয়ে এখন তারা নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সী জাহানারা বেগমের সংগে কথা হলে তিনি জানান, তার স্বামী লাল মিয়া দ্বিতীয় বিয়ে করে ২০ বছর আগেই তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এক ছেলে গোলাপ মিয়াকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছিল। বর্তমানে তিনি এ প্রকল্পের আওতায় দুই শতাংশ জায়গার উপরে একটি সেমি পাকা ঘর পেয়ে খুব শান্তিতে বসবাস করছেন।
এ আশ্রয়নে ঘর পাওয়া রিতা বেগম বলেন, এতদিন অন্যের বাড়ীতে একটি সাফরা ঘর তুলে দুটি মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতাম। স্বামী মুক্তার হোসেন মানুষের জমিতে দিন মুজুরের কাজ করে যা উপার্যন করে তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চঃল। নতুন ঘর পেয়ে খুশি রিতা বেগম। সারাদিন কায়িক পরিশ্রম শেষে এখন আর ফুটপাত বা অন্যেল ঘরে ফিরতে হবে না। ভূমীহীন ও গৃহীন হীন হতদরিদ্র রিতা বেগম এখন শান্তিতে নিজ ঘরে ঘুমাতে পারছেন।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (এস এ) মোছাঃ শারমিন ইসলাম জানান, জেলার ৬টি উপজেলায় ৩টি ধাপে মোট ৭০৬ টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৪১টি, পলাশে ৯৮টি, শিবপুরে ১২২টি, মনোহরদীতে ১৭৩টি, বেলাবতে ১৭০টি এবং রায়পুরা উপজেলায় ১০২টি পরিবারকে এসকল ঘর উপহার দেয়া হয়েছে।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়েল সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ও জে এম শাখা) শ্যামল চন্দ্র বসাক বলেন, সরকারী ব্যবস্থাপনায় নরসিংদীতে প্রতিটি ঘরের জন্য দুই শতাংশ খাস জমির বন্দবস্তাসহ দুই কক্ষের সেমি পাকা ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এসব ঘরের প্রতিটিতে একটি রান্না ঘর, টয়লেট এবং পানির ব্যবস্থাসহ সামনে খোলা বারান্দা রয়েছে। প্রতিটি গৃহ নির্মাণে ব্যায় করা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এছাড়া নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় আরো ৮৮৮টি ঘর নির্মাণের চাহিদা রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে আবেদন করা হয়েছে।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান জানান, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য অত্যন্ত চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এসব ঘরে আশ্রয় পাওয়াদের অধিকাংশই রাস্তার ধারে ফুটপাতে বা কারো আশ্রয়ে বসবাস করতেন। এসমস্ত ব্যক্তিরা এখন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর উপহার পেলেন। এর ফলে তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নত হবে। পর্যায়ক্রমে জেলার শতভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠি যাদের জমি ও ঘর নেই তাদের বসবাসের জন্য বাড়ী করে দেয়া হবে বলে তিনি জানান। এছাড়া জেলার কোনো ভূমিহীন এবং গৃহহীন যেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
বিএসডি/ এমআর