নিজস্ব প্রতিবেদক,
দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড পরিসংখ্যান বলছে, চলতি মাসের শুরুর ৫ দিনেই মারা গেছেন ৭২৬ জন। গত দশদিনে মারা গেছেন ১২৫৩ জন।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, করোনায় চলতি মাসের গড়ে প্রতি ৯.৯১ মিনিটে একজন মানুষ মারা যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিগত ৯ দিনের হিসেবে সেটি দাঁড়ায় ১১ মিনিটে।
সোমবার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এইদিন সর্বোচ্চ ১৬৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ৪ জুলাই ১৫৩ জন, ৩ জুলাই ১৩৪ জন, ২ জুলাই ১৩২ জন ও ১ জুলাই ১৪৩ জন করোনায় মারা যান। অন্যদিকে আগের মাসের শেষ পাঁচদিন ৩০ জুন ১১৫ জন, ২৯ জুন ১১২ জন, ২৮ জুন ১০৪, ২৭ জুন ১১৯ জন ও ২৬ জুন ৭৭ জন করোনায় মারা গেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে নতুন ১৬৪ জনসহ এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২২৯ জনে। এরমধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৭৮৫ জন এবং মহিলা ৪ হাজার ৪৪৪ জন। পুরুষ ও নারীর মৃত সংখ্যার শতকরা হার ৭০.৮২ ও ২৯.১৮।
বয়সভিত্তিক মৃতের সংখ্যা
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সী মানুষ সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছেন। নতুন ১৬৪ জনসহ এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৫০৬ জন মারা গেছেন, যার শতকরা হার ৫৫.৮৫। অন্যদিকে ০ থেকে ১০ বয়সী ৫২ জন, যার শতকরা হার ০.৩৪। ১১ থেকে ২০ বছর ৯৮ জন, যার শতকরা হার ০.৬৪ জন। ২১ থেকে ৩০ বয়সী ২৯২ জন, যার শতকরা হার ১.৯২। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৮৪৭ জন, যার শতকরা হার ৫.৫৬। এছাড়া ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী মারা গেছেন ১৭৪২ জন, যার হার ১১.৪৪ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বয়সী মারা গেছেন ৩৬৯২ জন, যার শতকরা হার ২.৮৫ জন।
বিভাগ ভিত্তিক মৃত্যুর সংখ্যা
করোনায় সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে নতুন ৪০ জনসহ করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৭৭৬৮ জন, যার শতকরা হার ৫১.০১।
মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এ বিভাগে নতুন ১৮ জনসহ করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৮৩৩ জন, যার শতকরা হার ১৮.৬০।
রাজশাহী বিভাগে নতুন ১৬ জনসহ করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১১২৮ জন, যার হার ৭.১ শতাংশ। খুলনায় নতুন ৫৫ জনসহ করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৪৯১ জন, যার শতকরা হার ৯.৭৯।
বরিশাল বিভাগে নতুন ৯ জনসহ করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৪৪৮ জন, যার শতকরা হার ২.৯৮। সিলেটে নতুন ৮ জনসহ করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৫৪৭ জন, যার শতকরা হার ৩.৫৯।
করোনায় সবচেয়ে কম মারা গেছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এ বিভাগে নতুন ২ জনসহ করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩১ জন, যার হার ২.২৪ শতাংশ। আর রংপুর বিভাগে নতুন ১৬ জনসহ করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৬৭৩ জন, যার শতকরা হার ৪.৪২।
মৃতের পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনায় ২০২০ সালে ১৬ এপ্রিল প্রথম মৃত্যুর পর ১০ জুন মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজারে পৌঁছায়। এরপর একই বছরের ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ অগাস্ট ৪ হাজার এবং ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। এর পরপরই করোনায় মৃত্যুর হার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজার ছাড়ায়।
এরপর চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি ৮ হাজারে পৌঁছায়। গত ৩১ মার্চ করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। গত ২৫ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়।
গত ১১ মে করোনায় মৃত্যু ১২ হাজারে পৌছায়। এরপর গত ১১ জুন করোনায় মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়ায়। পরে গত ২৬ জুন করোনায় মৃত্যু ১৪ হাজার পৌঁছায়। সর্বশেষ গতকাল ৪ জুলাই মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। যেটি মাত্র আট দিনে হাজার মৃতের রেকর্ড।
এদিকে করোনা শনাক্তের রেকর্ড হলো বাংলাদেশে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নয় হাজার ৯৯৬৪ জনের দেহে এই ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জনে।
করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় (৪ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৫ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারাদেশে ৩৪০০২টি নমুনা পরীক্ষায় ৯ হাজার ৯৬৪ জনের দেহে করোনা সনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জনে।
এ সময় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৪ দশমিক শূন্য ১৩ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬২টি।
বিশ্বব্যাপী করোনার জরিপ করা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২২২টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্তের দিক থেকে বাংলাদেশ ৩০তম অবস্থানে রয়েছে। আক্রান্তের দিক থেকে প্রথমস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৩৮৬ জনে। সুস্থ হয়েছে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ৮৩১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৯৩০ জনের।
বিএসডি/এমএম