নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করায় অভিভাবক মহল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। একটি ছাত্র সংগঠনকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলে ক্রমান্বয়ে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমিটি গঠন করতে পারে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্র রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মধ্যেও অস্বস্তি বিরাজ করছে।
ছাত্রলীগের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা বলছেন, ক্রমান্বয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়েই কমিটি দেবে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বাধার সৃষ্টি করলে কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস দেওয়ার কথাও ভাবছেন তারা। ছাত্রলীগের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্যমতে, গত ১ সেপ্টেম্বর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, আহ্ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর কমিটি ঘোষণা করা হয়, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, আইইউবিএটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিসহ কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সব মিলিয়ে ৪০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ কর্তৃপক্ষের সমালোচনার মধ্যেই গত সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, দায়িত্বশীল সুনাগরিক গড়তে রাজনৈতিক সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, তা সেই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক এম এম শহিদুল হাসান গনমাধ্যমকে জানায়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত কোনো ছাত্র সংগঠনের কমিটি নেই। কোনো সংগঠনের লোগো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো রাজনীতিও করার সুযোগ নেই। বাইরে কেউ কমিটি বা রাজনীতি করলে বিশ্ববিদ্যালয় অবগত না।
এদিকে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি- বাংলাদেশ (এআইইউবি) সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এ বিশ্ববিদ্যালয় অরাজনৈতিক উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোনো কমিটি গঠন করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এআইইউবির নাম, লোগো ব্যবহার করে যে কোনো কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞা কেউ অমান্য করলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি করতে একাধিক ক্লাব রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ। এখানে কোনো সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা যাবে না।
সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন পারভেজ গতকাল গনমাধ্যমকে জানায়, সরকার অনুমোদিত সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রমান্বয়ে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হবে। রাজনীতি করা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এতে বাধা দেওয়ার কারও নৈতিক অধিকার নেই। এরপরও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বাধার সৃষ্টি করলে সেগুলোতে ভবিষ্যতে আইনি নোটিস পাঠানো হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীদের চাহিদার প্রেক্ষিতেই দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য গনমাধ্যমকে জানায়, একজন শিক্ষার্থীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে হয়। ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া একটি ছাত্র সংগঠনকে রাজনীতি করার অনুমতি দিলে অন্যগুলোও রাজনীতি শুরু করতে পারে। তাই কোনো ছাত্রসংগঠনকেই এই অনুমতি দেওয়া হবে না।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আনোয়ার হোসেন জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকিতে পড়ে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। আর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার ঘটনা তো হরহামেশাই। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে মত দেন তিনি।
বিএসডি/কেএল