নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসছে আজ সোমবার। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণা দেবে। বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, ‘কমিশন সোমবার (আজ) বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুপুর ১২টার দিকে নতুন দাম ঘোষণা করা হবে। ’ দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ছে এটা নিশ্চিত, তবে কতটুকু বাড়ছে, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ’গত ১৩ নভেম্বর পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে আপিল করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খবরে বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলোও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করছে। পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের আলোকে এই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে বলে জানায় বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলো।
বর্তমানে নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশের মানুষ। আয়ের বেশির ভাগ টাকা ব্যয় হচ্ছে খাবার কিনতে। এ কারণে মানুষের ওপর এখন প্রচণ্ড আর্থিক চাপ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপিডিবির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগকে অস্বস্তিকর বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়। দাম ইউনিটপ্রতি পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আট টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়। কমিশনের গণশুনানি হয় ১৮ মে। গণশুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ভর্তুকি বাদে ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপ ও মানুষের জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় বিইআরসি বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে গত মাসে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। ঋণ পেতে সরকারকে কিছু শর্তও দিয়েছে সংস্থাটি। সেখানে আইএমএফ ভর্তুকি সংস্কারের জন্য বলেছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সরকার সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়। এর অংশ হিসেবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতে এমনিতেই মানুষ চাপের মধ্যে আছে, এখন নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা আরো চাপে পড়বে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়বে অর্থনীতি।
দেশে বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা বিপিডিবি। তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহক বা খুচরা পর্যায়ে বিতরণ করছে দেশের পাঁচটি কম্পানি। এগুলো হলো ডিপিডিসি, ডেসকো, আরইবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো। বিপিডিবিও পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রির পাশাপাশি দেশের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি দেখে আমরা গ্রাহক পর্যায়ের জন্য প্রস্তাব প্রস্তুত করছি। আশা করছি, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বিইআরসিতে প্রস্তাব জমা দিতে পারব। ’
তিনি বলেন, ‘পাইকারিতে দাম বাড়লে আমাদের অবশ্যই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়াতে হবে। কারণ আমাদের তো বিপিডিবির কাছ থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হবে। এখন সরকারের ভর্তুকির ওপর নির্ভর করছে পাইকারি ও গ্রাহক পর্যায়ে দাম কতটুকু বাড়বে। ’
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের এমডি মো. আজহারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদ্যুতের পাইকারি দামের সঙ্গে খুচরা পর্যায়ে দামের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। পাইকারিতে দাম বাড়লে তো আমাদের প্রস্তাব দিতেই হবে। আমাদের প্রস্তাব প্রস্তুত করা আছে। যখন পাইকারিতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানি হয়েছিল, তখনই গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির একটি প্রস্তাব আমরা প্রস্তুত করেছিলাম। এখন শুধু সেটি নতুন করে গোছানো হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (এনার্জি অডিট অ্যান্ড ট্যারিফ) কে এম নঈম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাইকারি দাম নিয়ে গণশুনানি করার সময় আমরা গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর একটা হিসাব করেছিলাম, যাতে পাইকারিতে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও বিইআরসিতে প্রস্তাব দিতে পারি। সেটি এখন নতুন করে প্রস্তুত করছি। ’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। এটি নিয়ে সরকার নিশ্চয়ই পরিকল্পনা করছে, ভাবছে। ’ তিনি বলেন, ‘শর্ত পূরণের জন্য আইএমএফ যতটুকু ভর্তুকি কমাতে বলছে, ততখানি না হলেও মাঝামাঝি কিছু একটা করবে সরকার। কারণ দেশ এমনিতেই অর্থনৈতিক চাপে আছে। ’