হঠাৎ করেই মনে থাকছে না কিছুই, অজানা আতঙ্কে কাটছে নির্ঘুম, স্মৃতিগুলো ধোঁয়াশে-নিয়ন্ত্রণহীন। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর প্রথমে স্বাভাবিক থাকলেও ধীরে ধীরে এসব লক্ষণ দেখা দিচ্ছে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে।
এ ছাড়া দিনের পর দিন ঘরবন্দি থাকায় অন্যদেরও উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় বাড়ছে মস্তিষ্কসহ শারীরিক জটিলতা। চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, সামাজিক কাঠামোর কারণেই কোভিডের সময় পরিবারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন সিনিয়র সিটিজেনরা।জীবন সায়াহ্নে পরবর্তী মুকুলে বেঁচে থাকা, পূর্বসূরিকে ভর করে গড়ে ওঠা উত্তরের অবগাহন। বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া জড়ানোর অঘোষিত প্রতিশ্রুতি জীবনের শেষ বিন্দুতেও। কেবল নতুনের মধ্যে বেঁচে থাকার আকুলতা।
এমনটা যেন পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের করোনাকালীন সময়ের অবস্থা। মানসিক সমস্যা বা মস্তিস্কের জটিলতা সমাজের সর্বস্তরের কাছে শারীরিক অন্য সমস্যার মতো স্বাভাবিক নয়। লকডাউনে পার্কের বেঞ্চটি ফাঁকা। নিয়মমাফিক সকাল হয়, কিন্তু হেসে ওঠেন না সুহৃদরা। পাবন্দি জীবনে পরিবারের শিশু তরুণরা যখন নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন কোনো না কোনো কাজে, তখন আতঙ্ক, অবসাদ আর উদ্বেগে বয়োজ্যেষ্ঠদের বাড়াচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ জটিলরোগের সূত্রগুলো, বলছেন চিকিৎকরা।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আজিজুল ইসলাম বলেন, যেটা আসরে আশা করা যেত না ৬০ বা ৬৫ বছর বয়সে স্মৃতি অতটা লোপ পেত না। কিন্তু এখন স্মৃতি অনেক লোপ পাচ্ছে। স্মৃতিলোপ পাওয়া, মানসিক বিকারগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হচ্ছে, কানে হয়তো উল্টোপাল্টা শুনছে।
এ ছাড়া সিনিয়র সিটিজেনদের পোস্ট কোভিডে আক্রান্তরা আছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। তাদের মধ্যে নিউরো বা মস্তিস্কের জটিলতা দেখা দিচ্ছে প্রকটভাবে, বলছেন গবেষকরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল এহসান মাকসুদ বলেন, মানুষের দেহ এবং মনকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কোডিভ থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময়ের পরেও এমনকি ৩০ দিন পরেও নিউরোসাইক্রেটিক সমস্যা, বিষণ্ণতা দেখা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে হতাশা বাড়তে থাকে, তাদের স্মৃতিভ্রম দেখা দিচ্ছে। ঘরবন্দি জীবনের ফলাফল আরো দুর্বিষহ হয় পারিবারে অন্য সদস্যদের অস্থিরতায়। তাই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়াতে পরিবারে কেয়ারিং-শেয়ারিং সমানতালে বাড়াতে হবে বলে মত চিকিৎসকদের।
সাজ্জাদ/ কাইয়ুম