নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে সাজা দিয়ে আটকে রেখে বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া গুরুতর মানবাধিকার লংঘন বলে মনে করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গত শনিবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে আজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
সভায় অংশ নেন মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টা জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। মির্জা ফখরুল জানান, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য তাদের পার্লামেন্টে বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এবং চলমান নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক অবস্থা ও চরম অমানবিক আচরণসহ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনীভাবে আটক ও তার প্রতি অমানবিক আচারনের বিষয় প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতীয় মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের কতৃত্ববাদী সরকারের জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, বিচার বহিভূত হত্যা কান্ড, গুমের ঘটনা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মতামত প্রকাশ করেছে। স্থায়ী কমিটি সভা মনে করে, যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিবেদনে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনী ভাবে সাজা দিয়ে তাকে আটক রাখা হয়েছে। এমন কি সুচিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এটা গুরুতর মানবাধিকার লংঘন। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক কারনে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি প্রদানের আহ্বান জানানো হয়। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি সেমিনার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সভা। এজন্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। করোনার মধ্যে চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচন অব্যাহত রাখার পক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্যে গভীর ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে, শুধুমাত্র সরকারি দলের বশংবদ হিসেবে কাজ করায় এই নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচনও অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি। ২০১৮’র একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন সবগুলোতে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতিরেখেই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সংবিধান লংঘন করে শুধু মাত্র সরকারি দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য জনগণের সঙ্গে বিশ^াস ঘাতকতা করেছে।
বর্তমানে দেশের গণতন্ত্রহীনতা, জনগণের সার্বভৌমত্ব হরণ এবং ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগের নীল নকশা বাস্তবায়নের প্রধান অংশীদার হয়েছে। সংবিধান ও জনগণের প্রতি কোনও দায়-দায়িত্ব না থাকার কারনে এই ধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য তাদের পক্ষে করা সম্ভব বলে সভা মনে করে। সভায় নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে জনগণের স্বাস্থ্যর সুরক্ষার জন্য নির্বাচন স্থগিত রাখার আহ্বান জানায়। অন্যথায় এর দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণ করতে হবে। সভায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতির খবর নিয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে, অবিলম্বে দুর্নীতির এই লোক দেখানো কার্মকান্ড বন্ধ করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জনগণের সামনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয় সভা। এজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ড. মইন খান। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে হাশেম ফুড এন্ড বেভারেজ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এবং নিহত ব্যক্তিদের বিদেহী আত্মার মাগফেতার কামনা করা হয়। সভা মনে করে, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার চরম অবহেলায় এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা বারবার সংঘটিত হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে এই ঘটনাটি হত্যার পর্যায়ে পড়ে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থা কল-কারখানার নির্মাণ মান, পরিবেশ এবং অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা, নিয়মিত পরিদর্শন ও নজরদারী না করার কারনেই এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারনে এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে সভা মনে করে। ফায়ার ব্রিগেডের ভূমিকা সম্পর্কেও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। ২৭ ঘন্টা যাবত অগ্নি নেভানো না পারা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সভা এই দুর্ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে এবং দায়ি ব্যক্তিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়। সভায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের যথাযথ ক্ষতি পূরণের আহ্বান জানানো হয়। সম্প্রতি ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ঢাকার সব হাসপাতাল গুলোতে একটি সার্কুলার জারি করেছেন এই বলে যে, কোভিড-১৯ করোনা সংক্রান্ত কোনও তথ্য কোন সাংবাদিক অথবা কোনও ব্যক্তিকে অথবা সংস্থাকে অনুমতি ব্যতিরেকে কেউ দিতে পারবে না। অর্থাৎ সিভিল সার্জেনই এখন থেকে কোভিড সংক্রান্ত তথ্য (যা তারা প্রকাশ করতে চান) সেই সম্পর্কে গণমাধ্যম অথবা অন্যান্যদের জানাতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত মুক্ত তথ্য প্রবাহ নীতির বিরোধী। কোভিড-১৯ সারা বিশে^র সঙ্গে বাংলাদেশেও চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এই নির্দেশ প্রদান প্রমান করছে যে, সারা তারা প্রকৃত তথ্য গোপন করছে এবং করতে চায়। সংক্রমণের ও মৃতে্যুর সংখ্যা সরকার প্রকাশিত সংখ্যার চাইতে অনেক বেশী।
সভা মনে করে এই ধরনের তথ্য গোপনের প্রচেষ্টা স্বাধীন গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রপন্থী। অবিলম্বে এই সকল নির্দেশ এবং তথ্য গোপন করবার অপচেষ্টা বন্ধ করে, জনগণের সামনে সত্য ও সঠিক চিত্র তুলে ধরলেই জনগণের সচেতনা বৃদ্ধি পাবে এবং সমস্যা সমাধান সহজ হবে। সভা অবিলম্বে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।
বিএসডি/সাজ্জাদ