২০০৭ সালে ছিপছিপে গড়নের তামিম ইকবাল দেশের ক্রিকেটটাকেই যেন বদলে দিতে এসেছিলেন। বিশ্বকাপে ভারতের জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে তামিমের বিশাল ছয়টা যেন বাংলাদেশকেই বদলে যাওয়ার মন্ত্র শিখিয়েছিল। সেদিনের সেই বিশ্বকাপে আরও এক তরুণ ছিলেন। তিনি সাকিব আল হাসান। তামিমের মত সেদিন অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন তিনি। দুজনেই ছিলেন বন্ধু। তবে দিনে দিনে সেই বন্ধুত্বে মরিচা ধরেছে। সম্পর্কের জল গড়িয়েছে ভিন্ন দিকে।
২০২৩ বিশ্বকাপ হতে পারতো তামিম-সাকিবের পঞ্চম বিশ্বকাপ। তবে তামিম খেলছেন না। সাকিব আজ অধিনায়ক। পুরো ফিট না থাকা তামিম ইকবালকে নাকি বিশ্বকাপে নিতে অসম্মতি জানিয়েছেন সাকিব নিজেই। তাদের দুজনের এমন অবস্থান মনে করিয়ে দিচ্ছে তিন দশক আগের এক স্মৃতি। সেবারও এমনই এক কাহিনী দেখেছিল ক্রিকেটবিশ্ব।
আশির দশকের পাকিস্তান ক্রিকেট বিশ্বের দরবারে ছিল দাপুটে এক নাম। আর সেই দাপটের কেন্দ্রে যে কজন ছিলেন তাদের মধ্যে দুজন ইমরান খান এবং জাভেদ মিঁয়াদাদ। একজন লাহোরের সন্তান। অক্সফোর্ডে পড়ুয়া, চলনে বলনে নায়কের চেয়ে কম নন। তিনি ইমরান খান। দ্য গ্রেট ইমরান। পাকিস্তান ক্রিকেটে যার জুড়ি মেলা ভার।
জাভেদ মিঁয়াদাদ করাচির ছেলে। আর দশজন পাকিস্তানি ছেলের মতোই রাস্তার ধারে ক্রিকেট খেলে শৈশব পার করেছেন। নিজের গুণে হয়ে উঠেছেন পাকিস্তান এবং বিশ্ব ক্রিকেটের বড় নাম। এতটাই বড়, তার নামই হয়ে গেল বড়ে মিয়া।
ইমরান এবং মিঁয়াদাদের মাঠের বাইরের সম্পর্কটা অবশ্য খুব একটা ভাল ছিল না। ইমরান দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে না পেরে অবসরেই চলে যান। সাল তখন ১৯৮৭। তার পরিবর্তে অধিনায়ক দরকার। সেই অধিনায়ক হলেন জাভেদ মিঁয়াদাদ।
ব্যক্তিগত বিভেদ ভুলে পাকিস্তানের জন্য এক হয়েছিলেন দুজন
কিন্তু ৯২ বিশ্বকাপের আগে মিঁয়াদাদের ব্যাটে প্রবল রানখরা। সেইসঙ্গে হানা দিয়েছে কোমরের ইনজুরি। ঠিক যেমনটা আজকের তামিম ইকবালের জন্য প্রযোজ্য। এদিকে প্রেসিডেন্টের অনুরোধে বিশ্বকাপের ঠিক আগে অবসর ভেঙে মাঠে ফেরেন ইমরান। ফিরেই অধিনায়ক বনে যান তিনি।
ইমরানও সেবার মিঁয়াদাদকে বিশ্বকাপে নিতে চাননি। এমনকি তাকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়া উড়াল দিয়েছিল দল। তামিমের মত করেই বিশ্বকাপ দল থেকে শেষ মুহূর্তে ছিটকে যান পাকিস্তানের সেই সময়ের সেরা ব্যাটার। তবে ইমরানের সেই সাহসী সিদ্ধান্ত কাজে লাগেনি। দলে যোগ্য পারফর্মার না থাকায় ব্যাপক ভরাডুবি পাকিস্তানের। পরেই মিঁয়াদাদকে ফেরাতে বাধ্য হন অধিনায়ক ইমরান। পাকিস্তান থেকে উড়াল দেন অস্ট্রেলিয়ায়।
এরপরের গল্পটা সবারই জানা। মিয়াদাদ আর ইমরান মিলে বিশ্বক্রিকেটে পাকিস্তানকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দেন। বড়ে মিয়া সেই বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচেই রানের বন্যা বসিয়ে দিয়েছিলেন। ৫ ইনিংসে ছিল অর্ধশতক। রান তুলেছিলেন ৬২ এর উপর গড় রেখে। পুরো টুর্নামেন্টে ছিল ৪৩৭ রান, যা ছিল সেই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।
এমনকি বিশ্বকাপ ফাইনালে ২৪ রানে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তানকে টেনে তুলেছিলেন এই দুজনেই। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন মিলে ১৩৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন।
সাকিব-তামিমের এই হাসিমুখ ফিরে আসার প্রতীক্ষায়
তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সেই চিত্রের অনেকখানিই এখন মিলে যায়। জাভেদের মতোই কোমরের চোটে আক্রান্ত তামিম। অধিনায়ক ইমরানের মতোই সাকিবও চাননি কোন অর্ধেক ফিট খেলোয়াড় দলে থাকুক। বুধবার বিকেল ৪ টার ফ্লাইটে তামিম থাকবেন না মিঁয়াদাদের মতো। সেটাও নিশ্চিত।
বাকি চিত্রনাট্য কী এক হবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য কিছু বলা যায়না। তবে সাকিব আর তামিম মিলে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জেতাচ্ছেন এমন কিছুর স্বপ্ন হয়ত সব বাংলাদেশিই দেখতে চাইবেন। তামিম কি পারবেন ৯২ এর সেই জাভেদ মিঁয়াদাদ হতে? প্রকৃতি তাকে সেই সুযোগ হয়ত দিবে না। তবে এমন স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়?
বিএসডি/এলএম