বগুড়ার কাহালুতে রাতের আঁধারে এক গ্রামের প্রায় ৩০০ বাড়িতে বিভিন্ন অংকের চাঁদা দাবি করে মূল দরজার সামনে নোটিশ লাগিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দাবিকৃত চাঁদা না পেলে ওই বাড়ির সন্তানদের অপহরণের হুমকি দেওয়া হয়েছে নোটিশে।
গতকাল শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতের কোনো এক সময় উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে এমন নোটিশ লাগানো হয়। নোটিশে কারও কাছে ২০০ থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘আসসালামু আলাইকুম, টাকা ৬ তারিখে দিতে হবে। না হলে ৭ তারিখ থেকে আপনাদের ছেলে-মেয়ে হারায় গেলে আমার কোনো কিছু করার থাকবে না। আমি বা আমরা কে সেটা না খুঁজে, আমি যা বলছি সেটা করার চেষ্টা করেন তাহলে কিচ্ছু হবে না। অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে ফেলায়েন না। যদি ছেলে-মেয়ের মঙ্গল চান তাহলে লোয়া-পুকুর সোলার লাইটের সাথে যে বক্স থাকবে, নিজের টাকার সাথে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে ওই বক্সে ফেলান আর নিজের বাচ্চাকে সুরক্ষিত করুন, ধন্যবাদ। [বিঃদ্রঃ] আমার এই কাগজ আপনি পড়ছেন, তাহলে মনে করেন আপনার ছেলে/মেয়েকে তুলে আনতেও পারবো। দয়া করে টাকাটা দিয়েন, আমরা ছেলেগুলা ভালো না। ভালো থাকবেন ৬ তারিখ পর্যন্ত, আল্লাহ হাফিজ। Shadow’
রোববার (১ অক্টোবর) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনায় সকাল থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাবাসীর মাঝে। অনেকে সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি।
বিষ্ণুপুর গ্রামের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা রিমু খাতুন বলেন, আমার বাড়ির দেয়ালে তিন হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে নোটিশ দিয়েছে। দুই ছেলেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। অবস্থা এ রকম হলে সন্তানদের নিয়ে আর গ্রামে থাকা সম্ভব না। যারা কাজটি করেছে দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা হোক।
একই গ্রামের বাসিন্দা শারমিন আকতার জানান, রাতের বেলায়কে পোস্টার লাগাইছে জানি না। অনেক কিছু লিখে রাখছে। কারও ২ হাজার, কারও ৫ হাজার টাকা চাঁদা ধরা হয়েছে। তবে আমার দরজায় ২০০ টাকা চেয়ে পোস্টার লাগাইছে। যাদের সন্তান আছে তাদের চাঁদা বেশি দিছে। আমার সন্তান নাই তাই ২০০ টাকা।
মুরইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানান, বিষ্ণুপুর গ্রামে ৫০০ বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০০ বাড়িতেই এমন নোটিশ দেয়া হয়েছে। সকালে আমার কাছে লোকজন আসে। ঘটনা শুনে আমরা গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। তবে কারা এ কাজ করলো এখনো কিছু বোঝা যাচ্ছে না। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করে গেছে। আমরা গ্রামবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আশ্বস্ত করেছি।
কাহালু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি এটা মাদকসেবীদের কাজ হতে পারে। এটা তেমন হাইগ্রেডের কেউ না। অল্প বয়সী কিছু বখে যাওয়া ছেলেপেলে এমন করতে পারে। আমাদের নজরদারি আছে, আমাদের টিম ওই গ্রামে আছে। এছাড়া আমরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করেছি কোনো সমস্যা নেই। আমরা এখনো এমন কোনো তথ্য পাইনি কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বের করতে আমরা চেষ্টা করছি।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কারা কারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
বিএসডি/এমএম