হাতে আর মাত্র সপ্তাহ দেড়েক সময়। চলছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে গেছে প্যান্ডেল বাঁধার কাজ। ছোট থেকে বড়, নানা প্রতিমার বাহারে সেজে উঠেছে মণ্ডপের আটচালা, যেখানে প্রতিমাশিল্পীরা প্রতিমা গড়ার কাজে মগ্ন। এর মধ্যে সাতক্ষীরার কলোরোয়ায় চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে ব্যতিক্রমী এক প্রতিমা গড়া হচ্ছে। পূজা শুরু হওয়ার আগেই এই প্রতিমা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত মানুষ।
পূজামণ্ডপটি উপজেলার পৌর সদরের মুরারীকাটি উত্তর পালপাড়ায় অবস্থিত। আয়োজকেরা মনে করছেন, হাজারো মানুষ এবার এখানে প্রতিমা দেখতে আসবেন। পুরো জেলায় এই প্রতিমার কথা ছড়িয়ে পড়েছে।
সরেজমিন গতকাল মঙ্গলবার পূজামণ্ডপে দেখা গেছে, মোট ১৮টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। চিনিগুঁড়া ধানের কারুকাজে নির্মাণ করা প্রতিমাগুলো দেখে মনে হচ্ছে যেন সোনা দিয়ে মোড়ানো। পুঁতির মতো একটা একটা করে ধান দিয়ে গেঁথে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমার অবয়ব।
এসব শৈল্পিক প্রতিমা গড়ার পেছনের মানুষ প্রহ্লাদ বিশ্বাস। এই প্রতিমাশিল্পী বলেন, ১৮টি প্রতিমা পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি করতে সম্পূর্ণ এক মাস সময় লেগেছে। শুরু করেছিলেন সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে। অক্টোবরের মাসের ১ তারিখে মোটামুটি কাজ গুটিয়ে আনতে পেরেছেন। তবে রংতুলির কাজ চলবে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত। এই মণ্ডপে দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুর, মহিষাসুরসহ ১৮টি প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট ও মাটি দিয়ে কাঠামো করা হয়েছে। পরে নকশি পাড় বসানোর পর একটি একটি করে বসানো হয়েছে চিনিগুঁড়া ধান। কিছু কিছু অংশে সোনালি রং স্প্রে করা হয়েছে। সবাই কাজের প্রশংসা করছেন, তাঁর ভালো লাগছে।
২০ অক্টোবর দেবী দুর্গার বোধন ও ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। মুরারীকাটি পালপাড়া পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি জীবন কুমার ঘোষ বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে তাঁরা এই দুর্গাপূজা করে আসছেন। ৪০তম বছরে এসে এবার ভিন্ন রকমের প্রতিমা করার চেষ্টা করেছেন যেন ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভালো লাগে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১০০ কেজি চিনিগুঁড়া ধান। প্রতিমাগুলো সোনালি আভা ছড়াচ্ছে। প্রতিমাশিল্পীর সঙ্গে প্রতিমা তৈরির জন্য এক লাখ টাকা চুক্তি ছিল। তবে খরচ হয়েছে লাখ টাকারও বেশি। এ ছাড়া পূজার পাঁচ দিনে তাঁদের ব্যয় হবে আরও প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
মুরারীকাটি উত্তর পালপাড়ার বাসিন্দা কাজল পাল বলেন, প্রতিমা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। খরচ একটু বেশি হলেও প্রতিমা দেখে যে-কেউ মুগ্ধ হবে।
কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলের ছাত্রী ফারিয়া সিদ্দিক, কলারোয়া আমানুল্লাহ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র আজমল হোসেন ও দেবাশীষ দাসের সঙ্গে উত্তর পালপাড়া পূজামণ্ডপে কথা হয়। তাঁরা সবাই চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা দেখতে এসেছেন। প্রতিমা দেখে তাঁরা মুগ্ধ বলে জানালেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলায় এবার ৬৬৫টি পূজামণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে কলারোয়া উপজেলায় হচ্ছে ৪৮টি পূজা। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রাখার জন্য জেনারেটর রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, কলারোয়ার মুরারীকাটি পালপাড়ার চিনিগুঁড়া ধানের তৈরি প্রতিমাটির ভিন্নতা রয়েছে। প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাঁশ, বেত, শোলাসহ নানা জিনিস দিয়ে আকর্ষণীয় প্রতিমা করা হয়। জেলায় ৬৬৫টি মণ্ডপে পূজা আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠুভাবে উদ্যাপন করা হয়, এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপগুলোয় আনসার, গ্রাম পুলিশসহ পুলিশের একাধিক দল টহলে থাকবে।
বিএসডি/এসএস