পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মিস পাকিস্তান ইউনিভার্স হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন এরিকা রবিন। আগামী নভেম্বরে এল সালভাদরে তাঁর বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা মিস ইউনিভার্সের চূড়ান্ত আসরে পাকিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার কথা।
এতে দেশের ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে বলে ফুঁসে উঠেছেন রাজনীতিবিদসহ অনেকেই। এ ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন দেশটির জামাত-ই-ইসলামির সিনেটর মুশতাক আহমেদ। দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার উল হক কাকার এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
২৪ বছর বয়সী এরিকা রবিন করাচি শহরের বাসিন্দা। তিনি খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা পাঁচজনের মধ্য থেকে তিনি মিস ইউনিভার্স পাকিস্তান নির্বাচিত হয়েছেন।
দুবাইভিত্তিক ইউজেন গ্রুপ এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। ইউজেন গ্রুপ মিস ইউনিভার্স বাহরাইন ও মিস ইউনিভার্স মিসরের ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক। গ্রুপটি জানিয়েছে, মিস ইউনিভার্স পাকিস্তান প্রতিযোগিতায় ‘বিপুলসংখ্যক’ আবেদন পাওয়া গেছে।
এরিকা রবিন বিবিসিকে বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে দারুণ লাগছে। কিন্তু এসব প্রতিক্রিয়া কোথা থেকে আসছে, তা বুঝতে পারছি না। সবার ধারণা, আমি পুরুষদের সামনে সাঁতারের পোশাক পরে প্যারেড করব। এ কারণেই এমন প্রতিক্রিয়া আসছে—অন্তত আমার তা–ই মনে হচ্ছে।’
এরিকার মনোনয়নের সমালোচনাকারীরা বলেন, তিনি এমন একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যে দেশ প্রতিনিধিত্ব করতে চায় না। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানে সুন্দরী প্রতিযোগিতা বিরল।
বিশ্বজুড়ে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নারীদের জন্য ‘মিস পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি প্রতিযোগিতা সুপরিচিত। ২০০২ সালে এই প্রতিযোগিতা প্রথম টরন্টোয় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২০ সালে সালে তা লাহোরে স্থানান্তরিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় মিস পাকিস্তান ইউনিভার্সাল, মিসেস পাকিস্তান ইউনিভার্সাল, এমনকি মিস ট্রান্স পাকিস্তানের মতো বিভিন্ন পর্বও দেখা গেছে। তবে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার ৭২ বছরের ইতিহাসে পাকিস্তান কখনো নিজ দেশের প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়নি।
এরিকা রবিন বলেন, প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় বাছাইপর্ব জুমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি দেশের জন্য কী করতে চান। জবাবে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘পাকিস্তান একটি পিছিয়ে পড়া দেশ—এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে চাই।’
তবে বর্তমানে পাকিস্তানে এই মনোনয়ন নিয়ে যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাতে এল সালভাদরে মিস ইউনিভার্সের চূড়ান্ত আসরে এরিকার অংশ নেওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
অবশ্য দেশটির মডেল, লেখক ও সাংবাদিকেরা এরিকাকে খুদে ব্লগের মাধ্যম এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) অভিনন্দন জানিয়েছেন। সাংবাদিক মারিয়ানা বাবর তাঁর ‘সৌন্দর্য ও মস্তিষ্কের’ প্রশংসা করেছেন।
পাকিস্তানি মডেল ভানিজা আহমেদ মডেলিংয়ে আসার জন্য এরিকা রবিনকে প্রথমে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি ভয়েস অব আমেরিকা উর্দুকে বলেন, পুরুষেরা ‘মিস্টার পাকিস্তান’ নামে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা করলে সমস্যা হয় না। তাহলে একজন নারীর অর্জন নিয়ে তাঁদের এত সমস্যা কেন?
করাচিভিত্তিক লেখক ও ভাষ্যকার রাফায় মেহমুদ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা অনেক দ্বান্দ্বিক জাতি। নারী ও প্রান্তিক মানুষের নানা ঘটনা থেকেই এসব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে।’
রাফায় মেহমুদ আরও বলেন, পাকিস্তান একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র। প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রে এ দেশে কঠোর পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন আছে। এরিকা রবিন যে ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছেন, তা এরই একটি সম্প্রসারিত রূপ।
তবে সেন্ট প্যাট্রিক হাইস্কুল ও গভর্নমেন্ট কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড ইকোনমিকসের স্নাতক এরিকা রবিন তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। তিনি বলেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করে কোনো আইনের লঙ্ঘন করছি না।’