বর্তমান সময় ডেস্কঃ
এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে ৫০-৬০টি আসন চাইবে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯টি আসনে সমঝোতা হয়েছিল তাদের। গত বারের চেয়ে এবার সংসদে অন্তত ১০টি আসন বেশি চায় জাপা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই এসব নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। দলের একাধিক এমপি ও নেতার সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তারা এ-ও বলে রাখছেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এখনও কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাপা মহাজোটের হয়ে ২৯টি আসনে লড়েছে। এর বাইরে জাতীয় পার্টি ১৩২টি আসনে লড়াই করে। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ২৯টি আসনের মধ্যে ২২ আসনে জয়লাভ করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী। পরে উপনির্বাচনে ঠাকুরগাঁও থেকে একজন জয়ী হলেও সমঝোতা হয়নি। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি জানায়, মহাজোট থেকে ২৯টি আসন পেয়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মহাজোটের সঙ্গে থেকে পেয়েছিল ২৭টি আসন।
জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি জানান, তারা গেল তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে সমঝোতা করেই নির্বাচনে অংশ নেয়। এবার তারা ৩০০ আসনে একক নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এখনই তাদের সেই সাংগঠনিক ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। সমঝোতার কথাও উড়িয়ে দেননি তিনি। মহাসচিব বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এমন পরিবেশ থাকলে জাপা নির্বাচনে যাবে। আরও কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তবে আমরা বিএনপির এক দফায় বিশ্বাসী নই।
জাপার সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান বলেন, এখনও আমরা পর্যবেক্ষণ মুডে আছি। তবে এবারও সমঝোতায় নির্বাচন হলে অবশ্যই চেষ্টা থাকবে আগের চেয়ে বেশি আসন আদায় করা। এ নিয়ে নানা দিক থেকে আলাপ আলোচনা চলছে। আমরা চেয়ারম্যানকে দায়িত্বভার দিয়েছি। যেভাবেই হোক আমরা চাই রাজনীতিতে লং টার্ম (দীর্ঘ দিন) টিকে থাকতে।
সম্প্রতি প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী (এমপি) বলেন, আসন বাড়িয়ে নেওয়াই এখন জাপার মূল লক্ষ্য। এবারও সরকারের সঙ্গে থাকতে দলের প্রায় সব এমপি ও অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতার চাপ রয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকাটাই নিরাপদ মনে করছি। কারণ তাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে সবকিছুতে অনেক দিনের ভালো বোঝাপড়া রয়েছে।
কয়েক মাস আগে সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া সংসদের উপনেতা জিএম কাদেরের বক্তব্য-বিবৃতি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক হইচই সৃষ্টি হয়। এমন আলোচনার মধ্যেই ৪ দিনের সফরে গত ২০ আগস্ট দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আমন্ত্রণে তার এই সফর ছিল। দিল্লি থেকে দেশে ফেরার পর মাস দেড়েক নীরব ছিলেন। এখন নীরবতা ভেঙে দলের কর্মসূচিতে বক্তব্য দিচ্ছেন। আগের মতো সরকারের সমালোচনায় যাচ্ছেন না।
এরই মধ্যে সংসদ অধিবেশনের শেষ দিন বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে জাপার ১৬ এমপি সাক্ষাৎ করেন। তারা বিএনপির অবরোধ রুখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এমপি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দলের সঙ্গে থাকতে চাই। চেয়ারম্যান একা চাইলেও বাইরে যেতে পারবেন না। আমাদের দলকে আগে টিকিয়ে রাখতে হবে। নির্বাচন বর্জন করলে কিংবা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে গেলে একটি বড় অংশ দ্বিমত পোষণ করবে। এতে দল আরেকবার ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। এবার আমাদের চাওয়া ৫০ থেকে ৬০টি আসন। তারপর দেনদরবার করে যা আদায় করে নেওয়া যায়। কারণ আমাদের সমর্থন ছাড়া কেউ সরকার গঠন করতে পারবেন না।
এদিকে বরাবরের মতোই বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলছেন। তার মুখপাত্র কাজী মামুনূর রশিদ জানান, এবার রওশন এরশাদ পঞ্চাশের বেশি আসন চাইবেন। তফসিলের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলাপ হবে। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ সেরেছেন তারা। আর রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ সময়ের আলোকে বলেন, আমরা চাই রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের এক ছায়ায় এসে নির্বাচনে অংশ নেবে। এ নিয়ে তাদের কথাবার্তা হচ্ছে। হয়তো শিগগিরই একসঙ্গে বসে বাকি বিষয় চূড়ান্ত করবেন।
এরশাদ ও জাতীয় পার্টি ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে ছিল। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে এরশাদকে ঘিরে অনেক নাটক হয়েছিল। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও জাতীয় পার্টিকে সেই নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছিল। তবে ওই নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির তিনজন নেতা আওয়ামী লীগ সরকারে মন্ত্রী হয়েছিলেন। একই সঙ্গে সংসদে বিরোধী দলের আসনেও বসেছিল জাপা।
বিএসডি/আরপি