বর্তমান সময় ডেস্কঃ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রস্তুতির সবশেষ অগ্রগতি নিয়ে আজ ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন। দিনক্ষণ না জানালেও আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন হতে পারে তফসিল ঘোষণা। এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।
গত ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাউন্টডাউন। আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির। সেই অনুযায়ী নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। ইতিমধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। নির্বাচনি উপকরণ কেনাকাটা শেষ করে এখন সেগুলো ধাপে ধাপে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে। এখন অপেক্ষা শুধু তফসিল ঘোষণার। এরপরই শুরু হবে ভোট আয়োজনের বাকি আনুষ্ঠানিকতা।
গতকাল ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অত্যাসন্ন। সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। ভোটের সব প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। নভেম্বরের প্রথমার্ধে (দ্বিতীয় সপ্তাহ) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। তিনি বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার আগে কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। বৃহস্পতিবার এ সাক্ষাতের সূচি রয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন প্রস্তুতি সংক্রান্ত সব ধরনের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করা হবে। প্রস্তুতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ ও নির্দেশনা থাকলে তা কমিশন শুনবে। তফসিল ঘোষণার এখতিয়ার সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের। তবে এ নিয়ে এখনও কমিশনে সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, নভেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধের যেকোনো দিন তফসিল হতে পারে। সে হিসেবে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আগামী সপ্তাহে ১২-১৪ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল হতে পারে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, এ বিষয়ে কমিশন যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখন গণমাধ্যমে জানানো হবে। নির্বাচন কমিশনের যেসব প্রস্তুতিমূলক কাজ রয়েছে, সব এগিয়ে রয়েছে। নির্বাচনি মালামালও ধাপে ধাপে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে
ভোটের পরিবেশ নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সম্পূর্ণরূপে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মতো পরিবেশ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে ইসি বদ্ধপরিকর। ভোটাররা নির্বিঘ্নে যাতে ভোট দিতে পারেন, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করবে এবং সেভাবে মন্ত্রণালয় কাজ করবে। ইতিমধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবেন।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের মতে তফসিল ঘোষণার অনুকূল পরিবেশ থাকলেও উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে তফসিল ঘোষণা হলে সংঘাত আরও বাড়বে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কমিশন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিলেও ইসি রাষ্ট্রপতির অধীনে না। কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা না করেও তফসিল দিতে পারেন আবার তফসিলের পরেও দেখা করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন কখন তফসিল দেবেন-এটা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবেন।
তফসিল ঘোষণার পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি ইসির ডাকা সংলাপে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। যারা করেছে তাদের মধ্যে এমনও দল আছে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণই করে না। আর যদি করেও তারা এত অল্প সংখ্যক ভোট পায় যে তাতে তাদের অংশগ্রহণ করা না করা গণতন্ত্রের জন্য তেমন কোনো বার্তা বহন করে না। এ রকমই যদি হয় তা হলে নির্বাচনের পরিবেশ আছে। যেহেতু একটা রাজনৈতিক দল হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে সমঝোতার কোনো প্রশ্ন উঠছে না বা আসছে না এবং সহিংস পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বিরাজ করছে। ফলে তফসিল ঘোষণা হলে এই সহিংস পরিস্থিতিটা আরও বেশি মাত্রায় বেড়ে যাবে। তাতে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধন হবে ও মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় আনলে দেখা যাবে নির্বাচনি পরিবেশ ততটা অনুকূলে নয়।
বিএসডি/আরপি