বর্তমান সময় ডেস্কঃ
২০১৩-১৪ সালের বিএনপি-জামাত কর্তৃক হরতাল-অবরোধে অগ্নি-সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে এগারোটায় রাজধানীতে জীবন্ত মানুষ পোড়ানোর অগ্নিসন্ত্রাসে দগ্ধ ও নিহতদের পরিবারের মানববন্ধন ও দায়ীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে সমাবেশে তারা এ দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, বিএনপি-জামাত প্রতিহিংসার রাজনীতি, অসাম্প্রদায়িক দেশকে লণ্ডভণ্ড করতে তারা হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ করে যাচ্ছে। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফলে অসংখ্য নারী-পুরুষের জীবন দুর্বিষহ হয়েছে। অনেকে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন। তাই আমরা আজকের এই মানববন্ধন থেকে এসব অগ্নি সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাই এবং এসব কর্মকাণ্ড যেন পুনরায় না হয় সে আহ্বান জানাই।
পেট্রোল বোমায় আহত খোকন মিয়া বলেন, আমি ২০১৩ সালে আমার গুলিস্তানের দোকান বন্ধ করে কাজলা রোডের কাছে পৌঁছালে আমাদের গাড়িতে পেট্রোল বোমা মারা হয়। আমি কোনোভাবে বেঁচে গেলেও দুই সপ্তাহ পরে হাসপাতালে আমার জ্ঞান ফেরে। দীর্ঘ ৯ মাস আমাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন আমাদের কাছে, আমাদের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এর বিচার পাইনি। আমরা চাই আর যেনো কখনো কারো উপর পেট্রোল বোমা মারা না হয়, কারো জীবন নষ্ট না করা হয়।
আলমগীর হোসেন শিমুলের ছেলে বলেন, ২০১৩ সালে আমার বাবা যখন বাজারে যান তখন তার গাড়িতে বিএনপি-জামাত আমাদের গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে৷ এতে গাড়ি পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বাবাও পুড়ে মারা যায়। অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে কিন্তু তাদের বিচার হয়নি। দীর্ঘ ১০ বছর আমরা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত। আর কোনো সন্তানকে তার বাবাকে হারাতে না হয় এই কামনা করি। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড মো. আখতারুজ্জামান নির্যাতিত, আহত ও নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, যে মানুষগুলো সেদিন আহত হয়েছিলেন তারা আজকের জীবন্ত লাশ। ২০১৩-১৪ সালে টানা হরতাল-অবরোধে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, জার্নালগুলোতে বাংলাদেশের ব্যাপারে নেগেটিভ দিক তোলে ধরা হয়েছিলো যার ফলে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছিলো। সে সময়ের হরতাল-অবরোধে দেশের যে ক্ষতি হয়েছিলো তা ভোলার নয়।
তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ সালের সেই হরতাল-অবরোধে ১০ হাজার গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছিলো যার মধ্যে ৫ হাজার যাত্রীবাহী গাড়ি ছিলো। বর্তমানের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, একদিনের অবরোধে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। এই অবরোধের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের দিকে ধাবিত করতে চাচ্ছে। এখন সেই অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তিরব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবী এবং যারা এর শিকার হয়েছিলো তাদের পুনর্বাসন করাটাও অত্যন্ত জরুরি।
অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদের আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন বাবুলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়া- সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এবং ভুক্তভোগী খুজেদাতুল নাসরিন, আপিল বিভাগের বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যমল দত্ত প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।
আহত ও নিহতদের পরিবারের পক্ষে- আনোয়ার হোসেন আনুর স্ত্রী পারভীন বেগম, মাশরুহা বেগম, নিহত নাহিদ মোড়লের মা রুনী বেগম, আহত সালাউদ্দিন ভূঁইয়াসহ আরও অনেকে বক্তব্য প্রদান করেন।
বিএসডি/আরপি