ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আজই গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এমন দাবিই করেছে আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতারা। মূলত দিল্লির ক্ষমতাসীন নেতাদের এমন দাবির পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
এতে করে বুধবার মধ্যরাত থেকেই সরগরম ভারতের রাজধানীর রাজনৈতিক মহল। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আজ তার বাড়িতে অভিযান চালানোর পর গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির নেতারা অভিযোগ করেছেন।
মূলত বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। দিল্লির আবগারি নীতি দুর্নীতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই ওই সমন পাঠানো হয়েছিল তাকে।
কিন্তু গত দুইবারের মতো এবারও তিনি সমন এড়িয়ে যান। তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও, ইডির পাঠানো সমন বেআইনি বলে দাবি করেন তিনি। আর এরপরই গুঞ্জন ওঠে, তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
আম আদমি পার্টির দলীয় সূত্র জানায়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়ির দিকে যাওয়ার রাস্তা দিল্লি পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
এনডিটিভি বলছে, দিল্লির আবগারি নীতি দুর্নীতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বছরের ২ নভেম্বর ও ২১ ডিসেম্বর অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দুই দফায় তলব করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেসময় তিনি সেখানে হাজির হননি। এরপর বুধবার তৃতীয় দফা নোটিশও অমান্য করে ইডির সামনে হাজির হতে অস্বীকার করেন কেজরিওয়াল।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলছে, ইডির আইনজীবীরা এখন কেজরিওয়ালের প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করছেন এবং তাকে নতুন করে সমন পাঠানো হবে। তবে বুধবার বেশ কয়েকজন এএপি নেতা বলেছেন, কেজরিওয়ালের বাড়িতে আজ সকালে তদন্ত সংস্থা অভিযান চালাবে, যার পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে আম আদমি পার্টির সিনিয়র নেতা এবং দিল্লির মন্ত্রী অতীশি জানিয়েছেন, ‘সংবাদ আসছে যে, ইডি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবনে কাল সকালে তল্লাশি চালাতে চলেছে। তাকে গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।’
পরে দলের সিনিয়র নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ, জেসমিন শাহ এবং সন্দীপ পাঠকের এক্স হ্যান্ডেল থেকেও একই পোস্ট দেখা গেছে।
মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, ইডির পাঠানো এসব সমন ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত’। তিনি বলেছেন, তাকে সাক্ষী নাকি সন্দেহভাজন হিসাবে ডাকা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। তার দল বলেছে, এই বছর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন থেকে তাকে দূরে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অবশ্য দিল্লি আবগারি মামলায় অনেক আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন আম আদমি পার্টির তিন জ্যেষ্ঠ নেতা মণীশ সিসোদিয়া, সঞ্জয় সিং এবং সত্যেন্দ্র জৈন। এমন অবস্থায় দলটি দীর্ঘদিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা ও এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছে। এমনকি তারা চায়, কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী থাকুক এবং জেল থেকেই তার কাজ করুক।
উল্লেখ্য, দিল্লির সাবেক লেফটেন্যান্ট গভর্নরের নির্দেশেই দিল্লির আবগারি নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে, কেজরিওয়াল সরকার নতুন আবগারি নীতি এমনভাবেই তৈরি করেছিল, যাতে নির্দিষ্ট কিছু বেসরকারি সংস্থা তাতে উপকৃত হয়।
এছাড়া এই নীতি তৈরিতে মদ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোও জড়িত ছিল। মূলত এই নীতিতে মদ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো ১২ শতাংশ লাভবান হতো। এর বদলে আর্থিক সুবিধা পেত আম আদমি পার্টি।
এই আবগারি নীতি ঘিরেই আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করছে ইডি।
বিএসডি / এলএম