চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস ও শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু সরকার শাহজাহান ওমরকে চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনে রাজি করিয়ে রাতারাতি বের করে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়েছেন। নির্বাচনে তাকে এমপিও বানানো হয়েছে।
বিচার বিভাগ কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ একপাশে আচরণ করলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? আমাদের চাওয়া, রাষ্ট্রযন্ত্র কোনো দলের নিজস্ব বাহিনীতে রূপান্তর না হয়ে যাতে তাদের কাঠামো মেনে চলে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) নগরের কাজীর দেউড়ি নসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ইতিহাসের সবচেয়ে কম ভোট পড়া নির্বাচনের মধ্যে অন্যতম দাবি করে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। উৎসবের পরিবর্তে চট্টগ্রামে ভোট বর্জনের এক নীরব প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে।
চট্টগ্রাম নগরের তিনটি আসনের প্রার্থীদের অবস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব আসনে প্রার্থীরা ভোটার আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেখানে ভোট পড়েছে ২০-২৬ শতাংশ। কিন্তু সারা দেশে ভোটের হার দেখানো হয়েছে ৪১ শতাংশের বেশি। যেখানে এজেন্ট ছিল না সেখানে জাল ভোটের মহোৎসব হয়েছে। এর মাধ্যমে ভোটের কাস্টিং বাড়ানো হয়েছে।
ডা. শাহাদাত নির্বাচনকে প্রহসনের ও তামাশার ভোট মন্তব্য করে বলেন, যেখানে নিজেরা নিজেরা ভোট করেছে সেখানেও ভোটের এ অবস্থা। তাতেই বোঝা যায় বিএনপি কী কারণে এ ভোট বর্জন করেছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ডাকা হরতাল অবরোধকে কেন্দ্র করে শত শত নেতাকর্মীর নামে নগরের প্রতিটি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত আড়াই মাসে মহানগরে ৩০টির বেশি মিথ্যা মামলা দায়ের করে প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ডা. শাহাদাত আরো বলেন, নির্বাচনের দিন বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত করে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং ২০০ থেকে ২৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের পরের দিন থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে চান্দগাঁও থানা পুলিশ কর্তৃক হয়রানিমূলক অভিযান, পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও মারধরের ঘটনা বিরতিহীনভাবে চলে আসছে।
তিনি বলেন, চান্দগাঁও থানা এলাকায় বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ এখন একাত্তরের দিনগুলোর চেয়েও সংকটকাল অতিক্রম করছে। চান্দগাঁও এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। চান্দগাঁও থানা পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করছে। দিনে-রাতে যে কোনো সময় নেতাকর্মীদের ধরতে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। টার্গেট করা ব্যক্তিকে বাসায় না পেয়ে তাদের বাবা, ভাই কিংবা অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের আটক করে কিংবা তাদের আত্মীয় স্বজনদের থানায় নিয়ে গিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হচ্ছে। চান্দগাঁও থানা এলাকা এখন অনেকটা পুরুষশূন্য। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে সাধারণ মানুষও ঘরে থাকতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান ও এরশাদ উল্লাহসহ উল্লিখিত নেতারা ওই দিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও তাদের আসামি করা হয়েছে। চান্দগাঁও শরাফত উল্লাহ পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার জামাল উদ্দিন। তিনি ওইদিন বোয়ালখালী বাড়িতে ছিলেন। তাকে ২০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ক্যাশিয়ার মো. হারুনকে ২১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অথচ ঘটনার সময় পেট্রোল পাম্পের ভেতরে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিবির গাড়ি পার্কিং করে রেখেছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে, দেখলে সবকিছু পরিষ্কার হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল উদ্দিন ও আবদুল মান্নান।
বিএসডি / এলএম