নিজস্ব প্রতিবেদক
পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করা খুব সহজ। ভারত নানাভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মধ্যে বাইরের উসকানি আছে। বাইরের উসকানিতে আমরা আগুনের মধ্যে তেল দিচ্ছি। আর অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতেই সব শ্রেণি-পেশা ও গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে আলাপ করলে পার্বত্য চট্টগ্রাম, আনসার বিদ্রোহ ও শ্রমিক বিদ্রোহের মতো ঘটনাগুলো ঘটত না বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার।
‘বাংলাদেশের ছাত্র বিপ্লব : ২০০৭-২৪: শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্র সংস্কার করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস সেমিনারটির আয়োজন করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অধিবাসী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদের যে অধিকার সেটা মানতে হবে জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ওরা তো আমাদের রাষ্ট্রের অন্তর্গত, বাইরের নয়। তাহলে তারা কেমন বাংলাদেশ রাষ্ট্র চায়, তাকে তো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটা রাজনৈতিক সংকট। তাদের রাজনৈতিক সংলাপে আনতেই হবে। আর কোনো বিকল্প নেই।
নো ভ্যাট অন এডুকেশনের মুখপাত্র ফারুক আহমাদ আরিফের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট এনায়েত উল্লাহ কৌশিকের সঞ্চালনায় সভায় সম্মানীয় অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলিউর রহমান।
তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অধিকার আন্দোলনের রায়হান তাহরাত, নো ভ্যাট অন এডুকেশনের সংগঠকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মারুফ আহমেদ, এসএম সুজাউদ্দীন, মির্জা আমির মাহমুদ মুরাদ, মো. উজ্জল হোসেন, আরিফ চৌধুরী শুভ প্রমুখ।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও শক্তিকে বৈধতা দেওয়ার নির্বাচনে না যাওয়ার দীর্ঘ আপসহীন অবস্থান না নিলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সম্ভব হতো না বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের উচিত ছিল প্রথমে তাকে গিয়ে অভিনন্দন জানানো। তাছাড়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার অধিকার আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এই রাষ্ট্রচিন্তক বলেন, তরুণদের মধ্য দিয়ে জনগণের যে ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে, তা যদি রাজনৈতিক দলগুলো মেটাতে পারে, অবশ্যই তরুণদের আলাদা রাজনৈতিক দল লাগবে না। আর যদি ধারণ করতে (রাজনৈতিক দলগুলো) না পারে, তাহলে তরুণদের অবশ্যই একটা নতুন রাজনৈতিক দল লাগবে।
তরুণদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, একবার দল করব, একবার করব না– এই বিভ্রান্তিতে ভোগা ভুল। যদি দল করতে চান, অবশ্যই দল করবেন। কেন দল করবেন, সেটা সঠিকভাবে জনগণকে বোঝাতে হবে।
ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা শুনে নয়, বরং তারেক রহমানের সংস্কারের কথাই শিক্ষার্থীরা বলছেন। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, শিক্ষার্থীরা সংস্কার চাইছে বলেই রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের দিকে যাচ্ছে। একজন সমন্বয়ক বলছিলেন, তারেক রহমান সাহেব নাকি ছাত্ররা যেসব কথা শুনতে চায় সেসব কথা বলছেন। আমি উল্টো করে বলতে চাই, তারেক রহমান সাহেব যে সংস্কারের কথা বলেছেন সে কথাগুলোই আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন বলছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমিতি ভেঙে দিতে হবে, এর প্রয়োজন নাই। কেউ যদি মনে করে তারা শিক্ষায় অবদান রাখতে চান, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ বানাবেন তখন আত্মীয়-স্বজনদের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য করবেন, এটা কখনোই হবে না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে।
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ইতোপূর্বে আনন্দমোহন কলেজ, ভারতীয় হোমস, পিসি কলেজ, বিএম কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যারা গড়ে ছিলেন তারা নিজেদের অর্থ দিয়ে তা করেছিলেন। সেখান থেকে কোনো ধরনের লাভ নেননি। অথচ এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলগুলো এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অবস্থার বিলোপ হতে হবে। যারা এসব প্রতিষ্ঠান করবে তারা পুরোপুরি বিনামূল্যে শিক্ষাদানে এগিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। একটি আধুনিক ও বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারি এমন শিক্ষাব্যবস্থা দরকার।