হাবিপ্রবি প্রতিনিধি,
শিক্ষাক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। করোনা পরিস্থিতিতে আমরা কেউ জানিনা কবে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মুখোমুখি হবে। এমন পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাসই যেনো শেষ ভরসা। আইজ্যাক অ্যাসিমভ অনেক বছর আগে যে স্ক্রিন-টিচারের ধারণা দিয়েছিলেন, তা যেন আজ সত্যিতে পরিণত হয়েছে। অবশ্য এ যন্ত্রই শিক্ষক, পাঠ্যক্রম সবই আপলোড করা আছে যন্ত্রে। বাস্তবে, করোনাক্লিষ্ট পৃথিবীতে এখনও মানব-শিক্ষকদের উপর ভরসা করতে হচ্ছে। কিন্তু ঘটেছে শিক্ষকদের ভূমিকার বদল। জুম,গুগলমিট, হোয়াটস্যাপ জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ক্লাসের বিস্তার।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসময়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সম্ভবপর না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনায় অনলাইনে পাঠদান শুরু করে প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২০ সালের ৫ মে থেকে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) তে শুরু হয় অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম। দীর্ঘ একবছরের এই অনলাইন পাঠদান কার্যক্রমে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের অনুভূতি তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দৈনিক বর্তমান সময়ের হাবিপ্রবি প্রতিনিধি রাকিবুল হাসান।
পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলাতে খুব ভালো ভাবেই শিখিয়েছে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা-মশিউর রহমান, ইইই ডিপার্টমেন্ট
করোনা মহামারী বিস্তারের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এক প্রকার বাধ্য হয়ে। সব কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও দুয়ারে কড়া নাড়ে অনলাইন ক্লাস নামক নতুন অভিজাত ভাবনা৷ বিকল্প হিসেবে সাময়িক ভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য নিশ্চয়ই এটি গ্রহণযোগ্য একটি ব্যবস্থা।
পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলাতে খুব ভালো ভাবেই শিখিয়েছে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা। শত কিলো দূরে থেকেও ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি না পেলেও শিক্ষার আলো গ্রহণে শিক্ষার্থীরা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে। প্রতিটি কাজের যেমন পজিটিভ বা নেগেটিভ দিক থাকে তেমনটা অনলাইন কার্যক্রমের মাঝেও ছিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অংশের শিক্ষার্থীরা গ্রাম অঞ্চল থেকে শুধুই মেধার দীপ্তি ছড়িয়ে পড়তে আসে। করোনা পরিস্থিতি জন্য পারিবারিক আর্থিক অনটন, ইন্টারনেট জনিত সমস্যা তাঁদের অধিক মাত্রায় ভুগিয়েছে এমনটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই কারো। শতাংশের হিসেবে পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে হিসাব করলে সংখ্যাটা যথেষ্ট লজ্জাজনক হবে নিশ্চয়ই। প্রশাসনের উদার বা মানবিক সহায়তা এ ধরনের সমস্যার সমাধান ও অনলাইন কার্যক্রমকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বোপরি, ক্যাম্পাস লাইফ ইজ ক্যাম্পাস লাইফ৷
শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা ও উৎসাহে মানসিক মনোবল অনেকটাই বেড়েছে-ফারজানা ফাইজা মুস্তারী , ইইই বিভাগ;
করোনাকালীন সংকটে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাতিল করে দেয়া হয়েছে কয়েকটি পাবলিক পরিক্ষা | আটকে আছে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরিক্ষা | দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে।
এমতাবস্তায় আমাদের মাঝে দেখা দিচ্ছিল সেশনজটে পড়ার আশংকা, পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ক্লাস রুমের বাইরে থাকায় পড়াশুনায় অনিয়মিত হয়ে পড়ছিলাম। তবে আমাদের অনলাইনে জুম অ্যাপ এর মাধ্যমে পাঠদান শুরু হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। পূনরায় শিক্ষকদের সান্যিদ্ধে আসতে পারায় পড়াশুনায় নিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা ও উৎসাহে মানসিক মনোবল অনেকটাই বেড়েছে। জুম অ্যাপ এ প্রাতিষ্ঠানিক ক্লাসের মতই একইসাথে মতবিনিময় করতে পারায় জ্ঞ্যানের আদান-প্রদান অব্যহত রাখা সম্ভব হচ্ছে। ক্লাস নিয়মিতকরন হওয়ায় এক সেমিস্টারের ক্লাস সম্পন্ন করে শিক্ষকরা অন্য সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করে দিয়েছেন | তবে ক্লাস নিয়মিত অনুষ্ঠিত হলেও পরীক্ষা না দিতে পারায় আমাদের একত্রে দুইটি সেমিস্টার এর পরিক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে প্রশাসন যা শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপে ফেলে দিচ্ছে |অনলাইন ক্লাস কল্যানকর হলেও শতভাগ শিক্ষার্থী এর সুবিধা পাচ্ছে না | অনেকের ক্লাস করার জন্য উপযুক্ত ডিজিটাল ডিভাইস না থাকায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে | পাশাপাশি মেগাবাইটের উচ্চ মুল্য, স্বল্প মেয়াদ এবং দূর্বল নেটোয়ার্ক অনেকের জন্য বাধা হয়ে দাড়িয়েছে তাই সকলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হচ্ছে না। ইউজিসি এবং টেলিটক চুক্তিতে আসলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর এ সিম না থাকায় এবং সিমের নেটওয়ার্ক সবজায়গায় সমান না হওয়ায় অনেকেই সেবা পাচ্ছে না ফলে ক্লাস করতে ব্যার্থ হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের একাংশ পিছিয়ে পরছে।
সংকটকালীন এই সময়ে অনলাইনে পাঠগ্রহনে শিক্ষার্থীদের যে সকল সমস্যা হচ্ছে সেগুলো সমাধান করে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন নিশ্চিত করা গেলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ফলে বৈশ্বিক মহামাড়ির এই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করে আমরা সবাই শিক্ষা কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে যেতে পারব এবং সেশনজট নামক অভিশাপ কে এড়াতে পারব বলে আশা করি।
অনলাইন ক্লাস গুলো আরো সঠিক ভাবে হলে ভালো হতো-মরিয়ম পারভীন মিথিলা সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
গত বছর প্রশাসনের কাছে অনেক আবেদনের পর আমরা সুযোগ পাই অনলাইনে আমাদের কোর্স গুলো সম্পন্ন করার, অনেক প্রতিকূলতা
থাকলেও আমরা সফলভাবে এ এক বছরের মধ্যে আমাদের একটি সেমিস্টারের সকল থিওরিটিক্যাল কোর্স শেষ করেছি এবং সেকেন্ড সেমিস্টার শেষ প্রায়।
কোর্স টিচাররা অনেকটা অবহেলা করলেও শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে সহায়তা করেছেন আমাদের কোর্স গুলো কমপ্লিট করতে।তবে আমাদের অনলাইন ক্লাস গুলো আরো সঠিক ভাবে হলে ভালো হতো।প্রশাসনের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমরা করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও আমাদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
গত দেড় বছরে পাঁচমিশালি অভিজ্ঞতা-মোঃ ফজলুল করিম,ফুড আ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
করোণা প্রকোপে শিক্ষার্থীদের জীবন কতটা বিপর্যস্ত সেটা সবারই জানা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস।
পাল্টে গিয়েছে পাঠদানের নিয়ম, এসেছে কিছুটা নতুনত্ব। আর আমরা সেশনজটের আশঙ্কা থেকে কিছুটা মুক্তির আশ্বাস পেয়েছি। নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছি এতোদিনে। সরাসরি না হলেও অনলাইনে শিক্ষকদের সান্নিধ্যে এসে পড়ালেখায় কিছুটা মনোযোগী হতে পেরেছি। বর্তমান পেক্ষাপটে অনলাইন ক্লাস গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমি এর কিছু অসুবিধাও উপলব্ধি করতে পেরেছি। নেটওয়ার্ক সমস্যাজনিত কারনে আমার অনেক সহপাঠী এই অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি মনে করি, এটি দীর্ঘমেয়াদী হলে আমাদের কারোর জন্য ভালো হবেনা। কেননা অনলাইনে ক্লাস হওয়াতে সবাই হয়ে যাচ্ছে আত্মকেন্দ্রিক, সহপাঠীদের থেকে দুরে রয়েছে সবাই, সহপাঠীদের সাথে আড্ডার আসর টাও জমছেনা, স্ক্রিনের কাছে চোখ রেখেই যাচ্ছি প্রতিনিয়ত যা একটা শিক্ষার্থীর জন্য কখনোই ভালোনা।
এককথায় গত দেড় বছরে পাঁচমিশালি অভিজ্ঞতা পেয়েছি অনলাইন ক্লাস থেকে। একদিক থেকে ভালো তো অন্যদিক থেকে খারাপ।
নির্বিঘ্নে ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছি-সাদমান সাকিব , মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
গত বছর লকডাউনে প্রসাশন কর্তৃক অনলাইনে কার্যক্রম অব্যহত রাখার প্রচেষ্টার কারণে আমরা অনেকটাই নির্বিঘ্নে ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছি।
আমরা আমাদের প্রথম সেমিস্টারের প্রত্যেকটি কোর্স সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। এবং আমরা আশাবাদী দ্বিতীয় সেমিস্টারের কোর্সগুলো শীঘ্রই শুরু হবে।এই করোনা পরিস্থিতিতেও আমরাদেরকে পড়াশোনা অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দেবার জন্য প্রশাসনের নিকট আমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
করোনা মহামারীর কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। এতে করে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এই ভোগান্তি কমিয়ে আনার জন্য সরকার অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষা ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি অনলাইন পদ্ধতিতে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর স্মার্ট ফোন নেই এবং নেটওয়ার্ক জটিলতার কারনে ঠিকমতো ক্লাসে জয়েন করতে পারেনি। তবে কিছুটা হলেও সুবিধা পেয়েছে শহরে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা। অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চললেও পরীক্ষা তো দূরে থাকুক এখনও অনেক ডিপার্টমেন্টের প্রথম সেমিস্টারই শেষ হয়নি। এতে করে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা সেশন জটের কবলে পড়েছে,পৌছে গেছে হতাশার চরম পর্যায়ে। তাই হাবিপ্রবি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেনো অতিদ্রুত অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সুবিধামত পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট থেকে মুক্তি দিন। এতে করোনা মহামারীতেও শিক্ষার্থীরা নিজের স্বপ্নের পথে একটু হলেও এগিয়ে যাবে।
বিএসডি/হাবিপ্রবি/রাকিবুল/তাওসিফ