আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করা হবে বলে কয়েকদিন আগে হুমকি দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একই সঙ্গে তিনি রাজ্যের সাঁওতাল পরগনায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জমি দখল করার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু এবার নীরবতা ভেঙে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানকার বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও দলটির মদতপুষ্ট আরএসএসের সদস্যরা ইঁদুরের মতো রাজ্য আক্রমণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হেমন্ত সরেন।
তার এই মন্তব্যের পর ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনওয়ালা বলেছেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন জাতীয়তাবাদী ও জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ‘চুহা (ইঁদুর)’ বলে ব্যাঙ্গ করেছেন। কিন্তু তিনি সাঁওতাল পরগণায় প্রবেশ করে জমি দখলকারী বাংলাদেশিদের সম্পর্কে কিছু বলেন না। কারণ এটা তার ভোট ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট।
ঝাড়খণ্ডের সাহিবগঞ্জে দেওয়া এক বক্তৃতায় হেমন্ত সরেন বলেন, আরএসএস ইঁদুরের মতো ঝাড়খণ্ড রাজ্য আক্রমণ করে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ‘হান্ডিয়া’ এবং ‘দারু’ (স্থানীয়ভাবে তৈরি মদ) নিয়ে আপনাদের গ্রামে তাদের প্রবেশ করতে দেখলে তাড়িয়ে দেবেন।
বিজেপি নির্বাচনের আগে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে বিভাজনের বীজ বপন করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও উত্তেজনা তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন। বিশেষ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ঝাড়খণ্ডে জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের বিষয়ে বিজেপির অভিযোগও খারিজ করে দিয়েছেন সরেন। পাশাপাশি সমালোচকদেরকে প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার তথ্য খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
‘‘তারা জনগণের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট করার চক্রান্ত করছে এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে কথা বলছেন। আমি তাদের বলতে চাই, কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। তারপর দেখুন কোন জেলায় এবং কোন রাজ্যে জনসংখ্যায় পরিবর্তন হয়েছে।’’
ঝাড়খণ্ডে কোনও জনগোষ্ঠীরই পরিবর্তন ঘটেনি বলে হেমন্ত সরেনের মন্তব্যের জবাবে পুনওয়ালা বলেন, ‘‘তাহলে কি এটা পশ্চিমবঙ্গে ঘটেছে? পশ্চিমবঙ্গে কার সরকার ক্ষমতায়?’’ বিজেপির এই নেতা বলেন, ‘‘বিজেপির সরকার নয়। বামদের সরকারের পর তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এসেছে। তাহলে তিনি স্বীকার করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন হয়েছে; যা বাম এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসিত।’’
এরপর দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইনডিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন পুনওয়ালা। তিনি বলেন, ‘‘এই বিরোধী জোটের এক দল অন্য দলকে টার্গেট করছে। পুরো বিরোধী শিবিরের যে, কোনও মিশন বা দৃষ্টিভঙ্গি নেই তা এর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।’’
‘‘তিনি (হেমন্ত সরেন) কি তাদের ওপর (পশ্চিমবঙ্গ সরকার) অসাবধানতাবশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণ করেছিলেন, তিনিই তা ভালো জানেন। কিন্তু সত্য বেরিয়ে এসেছে, পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন সত্যিই ঘটেছে। কিন্তু বিষয় হল ঝাড়খণ্ডেও এটা ঘটছে,’’ বলেন বিজেপি নেতা পুনওয়াল।
ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলের পরিবর্তিত জনসংখ্যা ইস্যুটি ইতোমধ্যে হাইকোর্টে উঠেছে। গত মাসে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাজ্য সরকার সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলে উপজাতীয় জনসংখ্যা হ্রাসের বিষয়ে নীরব ছিল। এই অঞ্চলে বাংলাদেশ থেকে আসা কথিত অবৈধ অভিবাসনকে তুলে ধরে জনস্বার্থ মামলার (পিআইএল) আবেদনের শুনানির সময় আদালত এই মন্তব্য করেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু।