নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে ইসলামী ভাবধারার সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জড়িত ৬ শিল্পীর পাশাপাশি তাদের আমন্ত্রণকারী মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে (৫২) আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন বাদি হয়ে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
এতে আসামি হওয়া শিল্পীরা হলেন- শহীদুল করিম (৪২), মো. নুরুল ইসলাম (৩৪), আব্দুল্লাহ ইকবাল (৩০), মো. মামুন (২৭), গোলাম মোস্তফা (৩৬) ও রনি (২৮)। তাদের মধ্যে শহিদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলাম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া শহিদুল করিম চট্টগ্রামের বেসরকারি তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক এবং নুরুল ইসলাম দারুল ইরফান অ্যাকাডেমির শিক্ষক।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ১০ অক্টোবর জেএমসেন পূজামণ্ডপে সন্ধ্যার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন আসা শুরু করেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের নিকট চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমির একদল শিল্পী অনুষ্ঠানে কয়েকটি দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারই প্রেক্ষিতে ওইদিন রাত ৮টার দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পরের সহযোগিতায় আসামিরা হিন্দু ধর্মের পূজা অনুষ্ঠানের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা নষ্ট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে দুটি গান পরিবেশন করেন।
তার মধ্যে একটি গানের ভাষায় শব্দচয়ন উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত করে। তাৎক্ষণিকভাবে পূজা উদযাপন কমিটির লোকজন গান পরিবেশনা বন্ধ করে দেয়। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া আসার কারণে অনুষ্ঠানে গোলযোগ সৃষ্টি হয় এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আসামিরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার লক্ষ্যে বিদ্বেষমূলক সংগীত পরিবেশন করেছেন। যা ফলশ্রুতিতে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ২৯৫, ২৯৫ (ক), ২৯৬, ২৯৮ ও ৩৪ ধারার অপরাধ আনা হয়েছে। ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দিবাগত রাতে জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে ইসলামী ভাবধারার সংগীত পরিবেশন করে চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমি নামে একটি সংগঠনের ৬ শিল্পী। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এতে সিএমপির উপ-কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতিদিনের ন্যায় জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে শিল্পীদের মাধ্যমে সন্ধ্যার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন পূজামণ্ডপে আসেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের প্রেক্ষিতে ঘটনার সময় ওই সংগঠজের সদস্য শহীদুল করিম, মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো. মামুন পূজার অনুষ্ঠানে আসেন এবং একটি ইসলামিক গজল ও একটি বাউল গান পরিবেশ করেন।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে একটি গানের ভাষায় শব্দ চয়ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা ২টি গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা ছিল কি না তা যাচাই করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, এই দলকে আমন্ত্রণ জানানো পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্তকেও খোঁজা হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমির সভাপতি সেলিম জামান জানিয়েছেন, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে সেখানে গান দুটি পরিবেশন করা করেছে শিল্পীরা। এগুলো সম্প্রীতির সংগীত। এরমধ্যে একটি হচ্ছে আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম…. এবং শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম…।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক সংবাদকর্মী জানান, সঞ্চালক ঘোষণা করলেন চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমির শিল্পীরা গাইবেন। তখন তারা দুটি সঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনেকে বলছেন জোর করে গাওয়া হয়েছে। আসলে তেমন কিছু সেখানে ঘটেনি। বরং সঞ্চালক নিজেই তাদের গাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।