বিনোদন ডেস্ক
রূপালি গিটার ফেলে, একদিন চলে যাবো দূরে বহুদূরে’- এক উদাত্ত কণ্ঠে, গিটার বাজিয়ে গানটি গেয়েছিলেন বাংলা ব্যান্ডের কিংবদন্তী শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। বুকে অনেক কষ্ট পুষে রাখা সেই গানের কথার ব্যতিক্রম ঘটেনি; ২০১৮ সালের আজকের এই দিনে লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান আইয়ুব বাচ্চু।
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর। এদিন ঘুম ভাঙতেই এক দুঃসংবাদ কানে আসে দেশবাসীর। আইয়ুব বাচ্চু আর নেই! সত্যি? যেন কেউ বিশ্বাসই করছেন না। রাস্তায় বের হতেই মানুষের মুখে মুখে একই খবর। তাহলে কি সত্যিই রুপালি গিটার ফেলে দূরে, বহুদূরেই চলে গেলেন গিটারের জাদুকর!
মুহূর্তের মধ্যেই শোকে ভারী হয়ে ওঠে সারাদেশ। সামাজিক মাধ্যমে একের পর এক নেটিজেনদের শোক; ভেসে ওঠে প্রিয় শিল্পীকে হারানোর বেদনা। সমাজ মাধ্যমের পাতাও ভরে ওঠে আইয়ুব বাচ্চুর সাদাকালো ছবিতে। বেলা বাড়তেই হাসপাতালে লোকারণ্য। চট্টগ্রামের শেষযাত্রার আয়োজনে জনসমুদ্র। ব্যান্ড সংগীতের জগতে এত বিষণ্নতা হয়তো এর আগে কেউ দেখেনি।
কিংবদন্তী এই শিল্পী বিদায় নেন মাত্র ৫৬তেই। এখন তার রুপালি গিটারটিও হয়তো রয়ে গেছে। সঙ্গে রেখে গেছেন- সেই তুমি, এক আকাশে তারা, ফেরারি মন, আমি বারো মাস, এখন অনেক রাত, রূপালী গিটারসহ অসংখ্য কালজয়ী গান। তবে প্রতিভা বলতে যদি বোঝায় শুধু আইয়ুব বাচ্চু, তাহলে তাই-ই।
১৯৮৩ সালে মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে ঢাকায় আসেন আইয়ুব বাচ্চু। এরপর কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে গড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক তারকা হয়ে উঠলেন।
আইয়ুব বাচ্চু যখন গিটার বাজাতেন, সেই সুর ঝলক দিয়ে উঠত শ্রোতাদের মনে। কনসার্টে একসঙ্গে এবির সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতেন ভক্তরা। ‘এবি’ ছাড়াও ভক্তরা তাকে আরও এক নামে ডাকতেন ‘বস’।
আইয়ুব বাচ্চু এমন একটি নাম, যেই নামটি অনেক বেশি ইউনিক। তার বাবাও চাইতেন ছেলের এমন একটা নাম হবে, যা অন্য কারও নেই। যেমন আইয়ুব আলী, আইয়ুব হোসেন—এমন তো হয়-ই। দুটি নাম থেকে আলাদা অংশ নিয়ে রাখা হলো, আইয়ুব বাচ্চু। সেই থেকে তিনি হলেন ‘ওয়ান অ্যান্ড অনলি’ আইয়ুব বাচ্চু।
নব্বই দশক থেকে আইয়ুব বাচ্চু জনপ্রিয়তা্র তুঙ্গে অবস্থান করে। কিন্তু এরপরও তেমন স্টারডর্ম কাজ করত না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছেন এই কিংবদন্তী। বলা বাহুল্য, তারকা হিসেবে নয়, একজন ‘ভালো মানুষ’ হয়ে, সবার হৃদয়ে থেকে বাঁচতে চেয়েছিলেন এই গিটারের জাদুকর।