নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ যেভাবে মানবতা লঙ্ঘন করেছে তাদের ন্যূনতম মানবতা করার কোনো সুযোগ নেই। আপনারা জানেন জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, ইতালিতেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইভাবে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ যুবলীগের যারা রয়েছে তাদের বাংলার মাটি থেকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ শাপলা চত্বরে আওয়ামী ষড়যন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মশাল মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। আবু সাঈদ এবং মুগ্ধের রক্তের প্রতি এখনও দায়বদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রলীগের গুন্ডাবাহিনী এক একটি জেলখানায় পরিণত করেছে। এই ছাত্রলীগের পুনরুত্থান ঠেকাতে যতগুলো বিরোধী শক্তি রয়েছে আমাদেরকে সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী যতগুলো শক্তি রয়েছে আমাদের সকলকে একত্রিত থাকতে হবে। আপনি হতে পারেন ছাত্রদল, আপনি হতে পারেন শিবির, হতে পারেন ডান, হতে পারেন বাম। এখন শুধু আমাদের একটাই পরিচয় আমরা স্বৈরাচারের বিরোধী।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আমরা নির্যাতিত হয়েছি নিপীড়িত হয়েছি, আমাদের পরিচয় আমরা মজলুম। সুতরাং এই জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের মজলুমের সংগ্রাম চালু থাকবে। ছাত্রদলের যে ভাইয়েরা রয়েছেন, শিবিরের যে ভাইরা রয়েছেন, সতর্ক হোন সচেতন হোন, আমরা এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চালু রাখব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ সমন্বয়ক বলেন, এই ফ্যাসিবাদী সরকার আপনার এবং আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে। আপনাকে ছাত্রদল হিসেবে আলাদা করবে, শিবির হিসেবে আলাদা করবে। বাম-ডান হিসেবে আলাদা করবে। শুধু আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা হচ্ছি মজলুম। সুতরাং এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি থাকবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আপনারা জানেন আমাদের মধ্যে জাতির পিতা নামে শেখ মুজিবকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আপনারা জানেন মেজর জিয়ার অবদানকে অস্বীকার করেছিল। জিয়াউর রহমান, যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তাকে রাজাকার বানানো হয়েছিল এ সরকারের আমলে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যাদের যাদের অবদান রয়েছে, এই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রত্যেকের যথাযথ হিস্যা প্রদান করতে হবে। যেখানে মেজর জিয়াকে হিস্যা দিতে হবে, সবাইকে হিস্যা দিতে হবে।
‘নয় মাস পাকিস্তানে থেকে বাংলাদেশে এসে শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে, আমাদের ওপর চাপিয়ে দেবে, সেটা আমরা কখনোই মেনে নেব না।’
তিনি বলেন, আপনাদের সতর্ক করে দিতে চাই, বাজারে বাজারে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে এই সরকারকে শক্তিশালী করার জন্য বাজারে বাজারে মনিটরিং করবেন, আপনারা নিশ্চিত করুন কোনো ধরনের টেন্ডারবাজি যেন না হয়, চাঁদাবাজি না হয়। যে যেখানে চাঁদাবাজি করবে চাঁদাবাজের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই, চাঁদাবাজদের একমাত্র পরিচয় তারা চাঁদাবাজ। তারা সন্ত্রাস তারা টেন্ডারবাজ। সুতরাং ছাত্রদের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ সমন্বয়ক বলেন, এর মধ্যে আমাদের যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে আমরা আপনাদের সহায়তা কামনা করি। আপনাদের যারা নেতৃবৃন্দ রয়েছেন আপনারা নির্দেশনা দেবেন বাজারে বাজারে মনিটারিং সেল চালু করতে। আপনারা জানেন বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনো ক্রমে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। যারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে, সমাজ নির্যাতিত হবে আমরা সকলে আবার নির্যাতিত হব। আমাদের সংগ্রাম জারি থাকবে, আমরা এই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা সমূলে উৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থেকে গণমানুষের কথা বলে যাব।
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদকে বিলুপ্ত করেছি। এই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার যে রূপকার, খুনি শেখ হাসিনাকে আমরা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি। আমরা খবর পেয়েছি কুমিল্লার পার্শ্ববর্তী সীমান্ত ত্রিপুরাতে এই ফ্যাসিবাদের যে গংরা রয়েছে তারা জমায়েতের অপচেষ্টা করছে। আমরা কুমিল্লা থেকে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিতে চাই ফ্যাসিবাদের দালাল যারা রয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, টোকাই লীগ আবার যদি এই বাংলাদেশে পুনর্বাসনের কোনো পরিকল্পনা করে কুমিল্লাবাসী দুর্বার গতিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হান্নান মাসুদ, কুমিল্লার সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসেন, রাশেদুল হাসান, রুবেল হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।