নিজস্ব প্রতিবেদক
সকাল কিংবা সন্ধ্যা, ইচ্ছে হলেই ঝোপঝাড় থেকে লোকালয়ে বেরিয়ে আসে শিয়াল। জড়ো হতে থাকে স্থানীয় মনির বিশ্বাস মন্নুর চায়ের দোকানে। শত লোকের ভিড়ে বিশ্বস্ত মন্নুর চায়ের দোকানে খাবার খাওয়ার জন্য উঁকি দিতে থাকে তারা। তারা এলেই আদর করে পাউরুটি, কেক ও বিস্কুট খেতে দেন মন্নু। মাগুরার পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের পাঁচপাড়া এলাকায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দেখা যায় এমন দৃশ্য।
এ নিয়ে কথা হয় চা দোকানি মন্নুর সঙ্গে। তিনি জানান, শখ করে তিনি শিয়ালগুলোর নাম রেখেছেন, কাম কামেনী, রস কামেনী, প্রেম ও মায়াবী। এই নামে ডাক দিলেই তার কাছে চলে আসে শিয়ালগুলো। তাদের সঙ্গে তার আত্মার সম্পর্ক। শুধু সন্ধ্যা নয়, সকাল হলেও শিয়ালগুলো তার দোকানের সামনে এসে বসে থাকে। তাকে না পেলে শিয়ালগুলো তার বাড়িতেও চলে যায় বলে জানান মন্নু।
শিয়ালের সঙ্গে তার এই বন্ধুত্ব এতোই মধুর যে অন্য কোথাও রাত্রিযাপন করেন না মন্নু । কোথাও গেলে তাদের কে খাওয়াবে- এই ভেবে কোথাও যান না তিনি। প্রাণীর প্রতি তার এমন ভালোবাসার কথা এখন গ্রামের মানুষের মুখে মুখে।
মন্নুসহ গ্রামের সবাই ভালোবাসেন শিয়ালগুলোকে। কেউ দেখলে আঘাত করেন না। ভালোবেসে কাছে টেনে নেন সবাই। যে যেমন পারেন, তেমন করে তাদের খাওয়ান। তাই মানুষের ভালোবাসা পেয়ে প্রতিদিনই লোকালয়ে আসে শিয়ালগুলো। তবে মন্নু হয়ে উঠেছেন তাদের বিশ্বস্ত বন্ধু।
মন্নুর ভালোবাসার ডাকে সাড়া দেওয়া শিয়ালগুলো কখনো সাধারণ মানুষের বা কৃষকের বাড়িতে কোনো হাঁস, মুরগি বা গৃহপালিত কোনো পশু পাখি খায় না।
মন্নুর প্রতিবেশী আজিজুল ইসলাম নামে এক দোকানি বলেন, মন্নু যে শিয়ালগুলো পালে তারা খুব ভালো। রাত ১২-১টা পর্যন্ত মানুষের মাঝেই থাকে। তারা কারো কোনো ক্ষতি করে না।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা করে, কিন্তু বনের পশু করে না। ডাক দিলে তারা চলে আসে। রুটি ছিঁড়ে দিলে খায়। আরও ১০ জন রুটি ছিঁড়ে দিলে তাও খাবে। তারা মানুষের সাথে মিশে গেছে।
মন্নুর দোকানে নিয়মিত চা খেতে আসা কাশেম বলেন, আমাদের মন্নু ভাই শিয়ালগুলো লালন-পালন করে খাবার দেন। আমরাও মাঝে মধ্যে খাবার দেই। নিজের সন্তান আমাদের কথা শোনে না, কিন্তু মন্নু ভাইয়ের শিয়াল মানুষের সঙ্গে মিলে মিশে চলে। কোনো হাঁস-মুরগি খায় না।
মাগুরা জেলা বন কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে, সেখানে বনের পশুর সঙ্গে সম্পর্ক এটা বিরল। এভাবেই আমরা সবার মাঝে মেসেজ দিতে চাই। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করতে পারলে পরবর্তী প্রজন্ম সুন্দরভাবে পৃথিবীতে থাকতে পারবে। বন্যপ্রাণীর সঙ্গে এমন সম্পর্ক জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।