নিজস্ব প্রতিবেদক
পুঁজিবাজার অর্থনীতির ভিত্তি রচনা জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুদ্রাবাজার অর্থনীতির সুন্দরতম সৃষ্টি। কিন্তু পুঁজিবাজারে অনিয়ম, দুর্নীতি, আইপিও বাণিজ্য ও কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে হবে।
শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি ক্লাবে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার-বর্তমান প্রেক্ষিত ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র রিপোর্টার দৌলত আক্তার মালা বলেন, পুঁজিবাজারে ডাবল ট্যাক্সসেশন আছে এবং ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্স আছে। প্রতি বাজেটেই সারপ্রাইজ হিসেবে আসে ট্যাক্সটা, হঠাৎ করেই বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন যে তাদের ওপর ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়ে।
প্রথম আলোর সাংবাদিক সুজয় মহাজন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসি এমন সব জরিমানা করেছে, যা আদায় নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। আসলে কমিশনের আদায় করার ক্ষমতা আছে কি না সেটাও একটা বিষয়।
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান কমিশন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর– এমন দাবি ও প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু বিএসইসিতে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়েছেন। এ ছাড়া কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত চলছে, যাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। বরং ওইসব কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি কাজ করছেন।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক ছিল। কেননা, গত ১৫ বছরে আমরা নির্যাতিত বা নিগৃহীত। সাবেক এক অর্থমন্ত্রীর ফটকাবাজার ধারণা থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা বের হয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে না। এটা বুঝতে হবে, পুঁজিবাজার অর্থনীতির ভিত্তি রচনা জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে সংস্কারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), ফান্ড ও বন্ড সম্পর্কিত কাজে কিছু সংস্কারের দরকার আছে। এ সংক্রান্ত সংস্কারে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করার চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, কিছু জায়গায় আমাদের স্বচ্ছতারও অভাব আছে। আমরা স্বচ্ছতা ফেরাতেও কাজ করব। পুঁজিবাজার ঠিক করতে সংস্কার প্রয়োজন। আমরা সেদিকেও নজর দেব।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। পুঁজিবাজার মুদ্রাবাজার অর্থনীতির সুন্দরতম সৃষ্টি। তবে আমরা আমাদের সৃষ্টিটাকে অসৃষ্টি তৈরি করে ফেলেছি। সেটা আমাদের সামগ্রিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকেরই একটা প্রতিচ্ছবি। দেশের মধ্যে দুর্নীতি, বিচারহীনতা, অদক্ষতা ও ভুল সিদ্ধান্ত– সেই বিষয়গুলো পুঁজিবাজারে আছে। সেটারই ফলাফল আজকেই এই পরিস্থিতি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দ্য ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার আহসান হাবিব, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বিশেষ প্রতিবেদক জেবুন নেসা আলোসহ আরও বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক।
আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, ডিএসই সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী, সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, বিএমবিএর সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান প্রমুখ।