নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহত ২১শর বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)। সেনাপ্রধানের নির্দেশে আহত সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সামরিক হাসপাতালের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ঢাকা সামরিক হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, ‘ওদের (গণঅভ্যুত্থানে আহত) প্রতিদিনের চিকিৎসাগুলো করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। আমাদের জন্য আনন্দের হলো আমরা ওদের জন্য সময় দিয়েছি, আমাদের রিসোর্স ও অর্থ খরচ করেছি। এগুলো আমাদের আনন্দ দিয়েছে। সাফল্যটা তখনই হবে যখন যেই রোগীটা অ্যাম্বুলেন্সে করে এলো, ট্রলিতে করে এলো এবং বিছানায় ছিল দীর্ঘদিন; এরা যখন আমাদের সামনে হেঁটে হেঁটে ঘোরে, তখন এটা আমাদেরকে একটা সাফল্যের গৌরব দেয় এবং আমাদের গৌরবান্বিত করে। সব কিছু মিলিয়ে আমরা অত্যন্ত হ্যাপি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সার্ভিসের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। এটা অনেকে হয়ত জানেন না। ১৭ আগস্ট রাতে সেনাপ্রধান স্যার আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, বাইরে অনেক রোগী আছে, যাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে, তুমি চিকিৎসা করতে পারবা কি না। আমি বললাম জি স্যার, আমি পারব। স্যার বললেন কতজনকে পারবা। আমি বললাম, স্যার যতজনকে পাঠাবেন, ততজনকে পারব। তারপর আমরা দুই ঘণ্টার মধ্যে সব অ্যারেঞ্জমেন্ট করে ফেললাম এবং পরদিন থেকেই রোগী আসা শুরু করল। এভাবে রোগী আসতে আসতে আজ পর্যন্ত ২ হাজার ১১২ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। এর ভেতরে ৫৮২ জন রোগীর অপারেশন ছিল গুরুতর এবং ভালো হয়েছে। আবার একইসঙ্গে দুঃখের বিষয়, আমরা ছয় জন মানুষকে বাঁচাতে পারিনি।’
এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ঘটনার পর সেনাপ্রধান স্যার আমাকে এক কোটি টাকা দিয়েছেন। আমরা সমাজকল্যাণ ফান্ড থেকে চার হাজার করে টাকা দিয়েছি। যাদের হুইল চেয়ার দরকার ছিল তাদের আমার হুইল চেয়ার কিনে দিয়েছি। আমাদের সামান্য সক্ষমতা ছিল, সেই সক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করেছি। এটা আমাদেরকে অনেক বড় একটা স্যাটিসফ্যাকশন দেয়।’
এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, ‘আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে থেকে কাজ করতে পারে। এটাই আমাদের গর্বের জায়গা। জনগণ ছাড়া সেনাবাহিনী যুদ্ধ করতে পারবে না কোনো দিন। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে থাকব, যেভাবে এসময়টায় ছিলাম। যারা আছেন, তাদের চিকিৎসা একইভাবে কন্টিনিউ হবে।’
সেনাপ্রধান স্যার আদেশ দিয়েছেন, আমরা কিছু রোগীকে চিকিৎসার জন্য চায়না মিলিটারি হসপিটালে পাঠাব। আবার কেউ যাবে সিঙ্গাপুরে, কেউ যাবে থাইল্যান্ডে।’