হেমায়েত উল্লাহ নূর
আমার খুব জ্বর
ভীষণ মাথা ব্যথা।
মন চায়, জ্বরের খবরটা সে জানুক।
সে আমার খোঁজ নিক, আমায় জিজ্ঞেস করুক ;আমার কেমন লাগছে? কিছু খেতে ইচ্ছে করছে কি-না।
মন চায়, সে কাছে এসে বসুক।
আমি ওষুধ খাইনি শুনেই সে রেগে উঠে ধমক দিয়ে বলুক, কেন ওষুধ খাওনি? অসুস্থ হয়ে পরলে কে দেখবে তোমায়? কে আছে এই শহরে তোমার-আমার?
তার ধমক আমার অনেক প্রিয়, তা অন্য কেউ বুঝবে না। তার ধমকের মাঝে কী এক মায়া। ধমকও যে ভালো লাগতে পারে, সে না ধমকালে কোনোদিন বুঝতাম না।
তাই আমার মন চাইবে, সে আরো বকুক। আরো, আরো, আরো।
কিন্তু, সে বেশিক্ষণ বকবে না। আস্তে আস্তে তার গলার স্বর টা কোমল হয়ে আসবে। আমার চোখের দিকে তাকাবে। যেন সে ভিন্ন কেউ। এতক্ষণ যে বকছে, সে না।
এরপর আস্তে করে আমার কাধে মাথাটা রেখে বলবে ; “তোমার কি খুব খারাপ লাগছে? এই যে আমি তোমার পাশেই আছি”। বলেই চুপ করে জড়িয়ে থাকবে।
এই স্পর্শ টুকু পাওয়ার জন্যও বারবার অসুস্থ হওয়া যায়।
আমি চাই সে খবরটা জানুক,
কিন্তু আমি তাকে জানাতে পারছি না।
আমি চাই তার অতৃপ্ত আত্মা আমার কাছে ছুটে আসুক, কিন্তু সেও আসতে পারছেনা।
আমরা চাই আমাদের একটা ঘর হোক, কিন্তু সেই ঘর আমরা বাধতে পারছি না।
আমি চাই, সে চায়, আমরা চাই, কিন্তু আমাদের মাঝে কী এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়েছে, যে দেয়াল ভেদ করে জ্বরের খবরটা পৌঁছাতে পারে না তার কাছে। যে দেয়াল ভেদ করে কেউ কাউকে ছুঁতে পারেনা। হাজারো আকাঙ্খা নিয়ে কাছে আসবার ইচ্ছেটাও যে দেয়ালের কাছে হেরে যায়।
আফসোস!
যে ভালবাসায় কোনোদিন ঘৃণা স্থান করতে পারেনি,অবজ্ঞা বাসা বাধতে পারেনি, সন্দেহ জায়গা করতে পারেনি।
সেখানে একটা দেয়াল কিভাবে জায়গা করে নিলো দুজনার মাঝে। কী নির্মমভাবে। কী নির্দয়ভাবে।
এতকিছুর পরেও ভালবাসা মরে নাই। ভালবাসার মৃত্যু নাই।
ভালবাসার কোনো অতীত নাই। ভালবাসা সব সময় বর্তমান।
ভালবাসা কখনো অতীত হতে পারে না। অতীত হয় প্রেম। অতীত হয় মোহো।
লেখক – কবি ও আবৃতি শিল্পী