ফিচার ডেস্ক ,
রাত পেরোলেই পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। ধন-সম্পদের মোহ ও মনের পাশবিকতা দূরীকরণের মহান শিক্ষা নিয়ে প্রতি বছর আসে এই দিনটি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকে। কুরআনে বলা আছে- “আল্লাহর কাছে উহার (জন্তুর) গোশত এবং রক্ত পৌছাঁয় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। (সূরা: হাজ্জ, আয়াত: ৩৭)।
সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর শর্তসাপেক্ষে কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহ পাক কুরআনে বলেন, তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।” (সুরা: কাউসার, আয়াত: ২)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ২১২৩, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ৮২৭৩)
কয়েকটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কোরবানি ওয়াজিব হবে। শর্তগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. মুসলমান হওয়া। কারণ অমুসলিমদের ওপর কোরবানির বিধান প্রযোজ্য না।
২. প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া। কারণ কোনো অপ্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তি নির্দিষ্ট সম্পদের মালিক হলেও তার ক্ষেত্রে কোরবানি আবশ্যক নয়।
৩. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া। কারণ মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না।
৪. স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া। কারণ কোনো ক্রীতদাসের ওপর কোরবানি আবশ্যক না।
৫. মুকিম হওয়া। মুকিম বলতে কোনো স্থানে ১৫ দিনের বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হওয়াকে বোঝায়। মুকিম হওয়ার শর্তের কারণ কোনো মুসাফিরের ওপর কোরবানি আবশ্যক নয়।
৬. যাকাত ফরজ হয় এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকে অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদ মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়, তখনও কোরবানি করা ওয়াজিব।
কোরবানির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা:
নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর শুধুমাত্র একটি কোরবানি ওয়াজিব হয়। অনেক সম্পদের মালিক হলেও একটি কোরবানি ওয়াজিব হবে। অবশ্য সে একাধিক পশু কোরবানি করতে চাইলে সওয়াবের অধিকারী হবে।
কোরবানি শুধুমাত্র নিজের ওপর ওয়াজিব হয়। তাই সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া পিতার ওপর ওয়াজিব নয়। অবশ্য নাবালক বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় এমন সন্তানের পক্ষ থেকে কোনো পিতা কোরবানি করলে সওয়াবের অধিকারী হবেন।
কোনো নারী নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপরও কোরবানি ওয়াজিব হবে। একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব।
কোরবানি ওয়াজিব নয় এমন কোন দরিদ্র ব্যক্তি কোরবানি করলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে এবং অধিক সওয়াব লাভ করবে।
বিএসডি/এমএম