চার বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প ১১ বছরেও শেষ হয়নি। ব্যয় বাড়ানো হয়েছে দুইবার। সময় বাড়ানো হয়েছে তিনবার। এর মধ্যে অনিয়ম করে ২০ কোটি টাকার কেনাকাটাও করা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটির আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই বলে সময় না বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
‘আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের ওই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১০ সালে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালে। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৫৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তবে প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭০৮ কোটি। সময় বাড়ানো হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। এর পরে ব্যয় না বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়।
জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মেয়াদে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩৬ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৬০ শতাংশ। প্রকল্পের লক্ষ্য পূরণ না হলেও সময় আর বৃদ্ধি না করে নির্ধারিত তারিখে মধ্যে বিধি মোতাবেক প্রকল্প শেষ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে আইএমইডি।
সম্প্রতি প্রকল্পটি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জুম মিটিংয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধি ছাড়াও পরিকল্পনা কমিশন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), আইএমইডি ও অর্থ বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রকল্প প্রসঙ্গে আইএমইডি মতামত তুলে ধরে।
২০১০ সাল থেকে চলতে থাকা প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৬০ শতাংশ। প্রকল্পটি ৭টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৬টি পৌারসভায় চলমান।
এই বিষয়ে আইএমইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নানা কারণে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নেই। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা উচিত হবে না। তাই আমরা বলেছি প্রকল্পটি সমাপ্ত করে দরকার হয় নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় অনিয়ম করে ২০ কোটি টাকার কেনাকাটা করা হয়েছে এই বিষয়টি নিয়েও স্টিয়ারিং কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পের বাইরে প্রায় ২০ কোটি টাকার পাঁচটি হাইড্রো হুইল লোডার এবং পাঁচটি হাইড্রোলিক এক্সক্যাভাটর কেনা হয়েছে, যা অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) নেই। তবে ২০ কোটি টাকার কেনাকাটার সময় স্থানীয় সরকার বিভাগ ও এডিবির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুটি পণ্য ক্রয় প্রকল্প সংক্রান্ত পরিপত্রের লঙ্ঘণ হয়েছে। পরিপত্রের ২১ বিধি অনুযায়ী এ ধরণের জরুরি প্রয়োজনে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে পরিকল্পনা কমিশনের পুর্বানুমতি গ্রহণ করা হয়। সভায় বিধি বহির্ভূত এই ক্রয়ের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে একটি রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এমনকি প্রকল্পের ধীরগতি ও ২০ কোটি টাকার কেনাকাটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হেলালুদ্দীন আহমেদ।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক নুরুল আলম বলেন, ২০ কোটি টাকার দুটি কেনাকাটা করা হয়েছে। এটা ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) ছিল না। পরে একটা কমিটি গঠন করা করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো রেজুলেশন হয়নি।
প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য ঢাকায় একটি ফুড ল্যাবরেটরি ও ট্রেনিং সেন্টার সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে একটি ফুড ল্যাবরেটরি নির্মাণ। সাতটি সিটি কর্পোরেশনে মোট ৪৬টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ। সাতটি সিটি কর্পোরেশন এবং ৩২৮টি পৌরসভার আর্থিক ব্যাবস্থাপনার উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতা অর্জন। নাগরিক বান্ধব জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক পলিসি ও গাইডলাইন নির্দেশিকা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। এছাড়া আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ। এছাড়া সিটি কর্পোরেসমূহে অটোমেশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়, ফুড ল্যাব এবং ট্রেনিং সেন্টার, রিক্সভ্যান সাপ্লাই, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য হাইড্রোলিক ডাম্প ট্রাক সরবরাহ, ইকুইপমেন্ট (ওয়েস্ট বিন) ফর আরবান প্রাইমারি কালেকশন, সাতটি সিটি কর্পোরেশনে ডাবল কেবিন পিকআপসহ অন্যান্য যানবাহন সরবরাহ, ফার্নিচার সরবরাহ , বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজের জন্য পে লোডার ও এক্সক্যাভেটর সরবরাহ।