বিনোদন ডেস্ক -
সদ্য মুক্তি পেয়েছে ঈদের বিশেষ নাটক ‘চিরকাল আজ’। নাটকে এমনেশিয়া বা স্মৃতিলোপের উপর এক গল্প দেখানো হয়েছে, যেখানে এই এমনেশিয়া রোগীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহ্জাবীন চৌধুরী। এটা পৃথিবীর বিরলতম রোগের মধ্যে একটি। এর অনেকগুলো ধরণের মধ্যে সবচেয়ে কঠিনতম হচ্ছে এন্টারোগ্রেড এবং রেট্রোগ্রেড এমনেশিয়া; যে কিনা তার স্মৃতি সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০ সেকেন্ড মনে করতে পারে, এরপর সবকিছু ভুলে যায়। এই বিরলতম রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্লাইভ ওয়েরিং; যিনি কিনা ইংল্যান্ডের একজন মিউজিশিয়ান। ‘দ্য ম্যান উইথ দা সেভেন সেকেন্ড মেমরি’ ডকুমেন্টারি থেকে এমন তথ্য জানা যায়।
সেই ডকুমেন্টারির অনুপ্রেরণায় এরকম একটি চরিত্রে অভিনয় করার দুঃসাহস প্রয়োজন, আর সেটাই দেখিয়েছেন এই অভিনেত্রী। হয়েছেনও সফল, যার প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নাটকটি ইউটিউবে অবমুক্ত হওয়ার পর যারাই কাজটি দেখেছেন তারাই ভূয়সী প্রশংসা করছেন তিথী চরিত্রে অভিনয় করা মেহুকে। ভিকি জাহেদের পরিচালনায় এখানে মেহুর বিপরীতে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো।
ফেসবুক পোস্টে একজন লিখেন, কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না। শুধু এটুকুই বলবো,ইটস মার্ভেলাস। আই এম স্পীচলেস।
অন্য একজন লিখেন, পুরা ১টা ঘন্টা আমি কিভাবে যে নাটকটা দেখলাম চোখের পলক না ফেলে। তোমার হাঁসিতে যে কেউ হাসবে তোমার অস্থিরতায় যে কেউ কাঁদতে বাধ্য হবে!!তুমি অসাধারন মেহ্জাবীন চৌধুরী।
সহশিল্পীর অভিনয়ের প্রশংসা করে অভিনেতা আফরান নিশো লিখেন, ইউ ডিড এক্সিলেন্ট জব। একদম ফাটাফাটি।
আরেকজন লিখেন, মেহ্জাবীন এমন একজন অভিনেত্রী যিনি যে কোন চরিত্রের অভিনয় অত্যন্ত দক্ষ ও নিখুঁতভাবে করে থাকেন। যার প্রমাণ আবারো আমরা ভিকি জাহেদের “চিরকাল আজ” নাটকে দেখতে পেলাম।
এমন একটা চরিত্র ধারণ করে অভিনয় করাটা খুব বেশি কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং ছিলো জানিয়ে মেহ্জাবীন চৌধুরী বলেন, একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে যেরকম চরিত্রের জন্য মুখিয়ে থাকি এই নাটকের তিথি চরিত্রটা ঠিক সেইরকম। আমার অভিনয় ক্যারিয়ারে এটাই প্রথম কোনো স্ক্রিপ্ট যেটা আমি টানা দুই থেকে আড়াইদিন পড়েছি, স্ক্রিপ্টটা পড়তে গিয়ে আমি রীতিমত অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম। এটা এতই ক্রিটিক্যাল যে, আমার ব্রেইন সেটাকে হজম করতে পারছিলো না। এমন একটা গল্প যেটা বারবার পড়েও শেষ করতে পারছিলামনা। যখনই ভাবি এই চরিত্রটা আমাকে করতে হবে তখনই আমি রীতিমত অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম! কোনো কাজ করার আগে আমি জীবনেও কখনো এতটা নার্ভাস, কনফিউজড, ব্ল্যাংক ফিল করিনি।
কারণ, এই বিরলতম রোগে পৃথিবীতে খুব সম্ভবত একজনই আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্লাইভ ওয়েরিং, যাকে নিয়ে পরে একটা ডকুমেন্টারিও হয়েছিলো। আর অন্য কারও হয়ে থাকলেও সেটা দেখার বা জানার কোনো উপায় নেই। ডকুমেন্টারি দেখেও আমি কোনোভাবে স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। উনি ছিলেন একটা বয়স্ক পুরুষের আর আমি একটা মেয়ে। এরকম রোগ যে কিনা ৭-১০ সেকেন্ডের বেশি কিছু মনে করতে পারেনা, একই কথা বারবার রিপিট করে। যতই চরিত্রটা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে জানার চেষ্টা করছি ততই আমি কনফিউজড হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি বারবার সবকিছু ভুলে যাবো, চোখের পলক ফেলবো আবার নতুন করে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে হবে। এই কাজটা আমার জন্য খুবই কঠিন এবং অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিলো। আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম, কাজটা করতে গিয়ে। শুটিং করতে গিয়েও আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম। কাজটা করতে গিয়ে বারবার আমার শুধু মনে হচ্ছিলো যাদের সাথে এটা ঘটেছে তাদের কি অবস্থা, তাদের পরিবার বা প্রিয়জনদের কি অবস্থা হয়েছিলো! এটাই শুধু মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছিলো।
তিনি আরও বলেন, আমি এখন পর্যন্ত যতগুলো কাজ করেছি, আমার ক্যারিয়ারে এটাই সবচেয়ে বেশি কমপ্লিক্যাটেড চরিত্র ছিলো। এখন পর্যন্ত অভিনয় ক্যারিয়ারে এটাই আমার সেরা কাজ। বেঁচে থাকলে হয়তো সামনে আরও করবো। কিন্তু এই একটা স্ক্রিপ্টে কাজ করতে গিয়ে আমি পুরো ব্ল্যাংক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি গাড়িতে করে যখন শুটিংয়ে যাচ্ছিলাম, তখনো পর্যন্ত আমি জানিনা যে কি করবো আমি! ভিকি জাহেদ আমাকে বারবার বলছিলেন যে, আপু ডকুমেন্টারিটা দেখেন তাহলে আপনার কিছুটা সহযোগিতা হবে। এরপর আপনি যেটা করবেন সেটাই নতুন কিছু হবে কারণ এই রোগটা নিয়ে যেহেতু আমাদের দেশে কোনো কন্টেন্ট হয়নি তাই যদি আমরা ঠিকমত কাজটা করতে পারি তাহলে এরপরে এই রোগের ওপরে যদি কখনো কোনো কন্টেন্ট তৈরি করা হয় তখন সবাই এই কাজটাকে উদাহরণ বা রেফারেন্স হিসেবে দেখতে পারবে। আর সেই উদাহরণটা যদি আমরা তৈরি করতে পারি তাহলেই মনে করবো আমরা সাকসেস।
আফরান নিশো ভাইও অনেক সহযোগিতা করেছে। উনি আমাকে বারবারই বুঝিয়েছে যে, সবকিছু ভুলে যাও, যত দেখাব তত কনফিউজড হবা। কারণ আমরা যেহেতু জানিনা যে এটা সামনে থেকে দেখবে তার রিয়েকশনটাও কেমন হবে; তার জন্যও সেটা নতুন। তুমি নিজের মতো করে করো।
আমরা যখন এটার শুটিং করি তখন আমাদের দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো। এই অবস্থাতে কাজ করাটাও খুব বেশি কষ্টকর ছিলো। যতটুকু সম্ভব হয়েছে পুরো টিম মিলে সর্বোচ্চটা দিয়েই চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার।
নির্মাতার প্রশংসা করে এই অভিনেত্রী বলেন, ভিকি জাহেদ এই সময়ের একজন তরুণ ও মেধাবী নির্মাতা, যে কিনা একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং দর্শকদেরকে সুন্দর সুন্দর কাজ উপহার দিচ্ছেন। এত চ্যালেঞ্জিং একটা চরিত্রে আমাকে কাস্ট করার জন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ, এটা আমি সবসময় মনে রাখবো।
পাশাপাশি বলতে চাই, সহশিল্পী হিসেবে আফরান নিশো বরাবরই দারুণ। তার সঙ্গে কাজ করতে বেশ ভালো লাগে, অনেক কিছু শিখা যায়। সেইসাথে টিমের সবার সহযোগিতাতেই আমরা এত সুন্দর একটি কাজ করতে পেরেছি।
সবশেষে বলতে চাই, এখন পর্যন্ত যারাই দেখেছেন তারাই অনেক প্রশংসা করেছেন। আর যারা দেখেননি তাদেরকে বলবো কাজটি দেখুন, হয়তো নতুন কিছু দেখতে পাবেন, জানতে পারবেন এখানে।
নাটকটিতে মেহ্জাবীন-নিশো ছাড়া আরও অভিনয় করেছেন সাবেরি আলম, কায়েস চৌধুরী প্রমুখ।\
বিএসডি/এমএম