নিজস্ব প্রতিবেদক,
অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের জয়জয়কার মুহূর্তেও পাঠকপ্রিয়তা রয়েছে প্রিন্ট মিডিয়ার। এখনো মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়া হয় পত্রিকা। আর এই পৌঁছানোর কাজগুলো যারা করেন, তারা হলেন অবহেলিত হকার। গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও আশেপাশের এলাকার হকাররা দীর্ঘ দিন ধরে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সংবাদপত্রের পাঠক কমে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাস শুরুর আগে গাজীপুর মহানগরীর ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৪৯ জন হকার প্রতিদিন ১০ হাজরের বেশি পত্রিকা বিলি করতেন। এখন তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৬ হাজারে। অনেক কষ্টে পত্রিকার সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও সুদিনের অপেক্ষায় আছেন তারা।
গাজীপুর পৌর সুপার মার্কেটের নিচে পত্রিকা বিক্রেতারা জানালেন তাদের কষ্টের কথা, বর্তমানে মহামারি ছড়ানোর আতঙ্কে বিভিন্ন সরকারি অফিসে পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া স্কুল-কলেজগুলো রয়েছে বন্ধ। বেসকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি বিধিনিষেধ মেনে খোলা থাকলেও তারা আগের মতো নিয়মিত পাত্রিকা রাখছে না।
জয়দেবপুর পৌর সুপার মার্কেট পয়েন্টের সুপার ভাইজার কাজী মো. আব্দুল মান্নান বলেন, অনেক ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে এখন পত্রিকা রাখে না। ব্যবসায়ীরাও দোকানপাটে পত্রিকা রাখে না। বর্তমানে জয়দেবপুর শহরে তিন হাজার পত্রিকা কম চলে।
জয়দেবপুর রেল স্টেশনের পত্রিকা বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া বলেন, করোনার কারণে প্রতিদিন আমাদের পত্রিকা বিক্রি কমছে। গত দেড় বছর আগে করোনা মহামারির কারণে স্কুল কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ করে দেয় সরকার। সে সময় হকার ও পত্রিকার এজেন্টরা খুবই দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছেন। পরবর্তী সময়ে সীমিত আকারে খোলার পর থেকে অল্প সংখ্যক পত্রিকা বিক্রি হলেও তাতে চলছে না পত্রিকার বিক্রেতাদের সংসার।
জয়দেবপুর এলাকায় পত্রিকার ডিস্ট্রিবিউটর ইউসুফ খান বলেন, মহামারি শুরুর পর থেকে অফিসগুলো প্রথম পর্যায়ে একেবারে পত্রিকা নেওয়া কমিয়ে দেয়। পরে কিছু অংশে বৃদ্ধি করলেও পত্রিকা বিক্রি করে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসারের খরচ, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকারি ও বেসকারিভাবে সে রকম কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে সবাইকে পেশা পরিবর্তন করতে হবে।
এক পেপার হাউজের মালিক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, করোনার প্রথম দিকে পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে একটু স্বাভাবিক হওয়ার ফলে এখন কিছুটা পত্রিকা চলছে। আমরা চাইলেই এখন অন্য পেশায় যেতে পারছি না। আমাদের দিকে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও পত্রিকা মালিকরা সুদৃষ্টি দিলে হয়তো আমাদের জীবন মান কিছুটা স্বাভাবিক হবে।
বিএসডি/ এমএম