ডেস্ক রিপোর্ট-
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোববার (২৫ জুলাই) প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস। পাশাপাশি এ ধরনের মৃত্যুকে ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
গত ২৮ এপ্রিল পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ বিষয়ক ঐতিহাসিক এ রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে গৃহীত এই রেজুলেশনটি উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। রেজুলেশনটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে একটি ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের রেজুলেশন এটাই প্রথম।
বিশ্ব পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমষ্টি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখানো হয়েছে, গত ১৯ মাসে (এ বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত) ৯৬৭টি ঘটনায় ১ হাজার ৫৬২ জন পানিতে ডুবে অথবা নৌযান দুর্ঘটনায় মারা যায়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৩২ জন পানিতে ডুবে এবং ১৮০ জন নৌযান দুর্ঘটনায় ডুবে বা আহত হয়ে মারা যায়। উভয় ঘটনায় মৃতদের ১ হাজার ৫৬ জনের (৭০ শতাংশ) বয়স ১০ বছরের কম। পানিতে ডুবে মৃতদের মধ্যে নারী ও কন্যা শিশু ৫৪৯ জন (৩৬%), পুরুষ ও ছেলে শিশু ৯৫৭ জন (৬৪%)। গণমাধ্যম সংবাদ থেকে ৬ জনের লৈঙ্গিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর জাতীয়ভাবে কার্যকর তথ্যায়ন ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ ঘটনাই গণমাধ্যমে উঠে আসে না। ফলে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায় না। পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে জাতীয়ভাবে সর্বশেষ জরিপটি হয়েছে ২০১৬ সালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ পরিচালিত ওই জরিপে তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী প্রতিবছর সব বয়সী প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অর্থাৎ আনুমানিক ১৪ হাজার ৫০০ জনই ১৮ বছরের কম বয়সী।
সমষ্টি’র গবেষণায় দেখা যায়, গত ১৯ মাসে নৌযান দুর্ঘটনা বাদে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম বিভাগে, ২৭১ জন (২০%)। এছাড়া ঢাকায় ২২৮ জন, রংপুরে ২০১, রাজশাহীতে ১৮৫, ময়মনসিংহে ১৪১, বরিশালে ১২৭, খুলনা বিভাগে ১০৮ জন মারা যায়। এ সময়ে সবচেয়ে কম মৃত্যু ছিল সিলেট বিভাগে, ৭১ জন (৫%)।
পানিতে ডুবে মৃতদের ৯১ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। চার বছর বা কম বয়সীদের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু সবচয়ে বেশি, ৫৬২ জন (৪২%)। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৪৬২ জন (৩৫%), ১০-১৪ বছরের ১৫২ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ৩৮ জন। ১১৮ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের বেশি।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে পানিতে ডোবার ৭৯ শতাংশ ঘটনা ঘটে দিনের বেলায়।
বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছে। সরকার ও দাতা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পাইলট ভিত্তিতে কয়েকটি জেলায় কিছু কিছু কাজ হচ্ছে।
বিএসডি/এমএম