আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন তৎকালীন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ.এ.কে নিয়াজি।
আত্মসমর্পণের দলিলে দুই দেশের সেনা কর্মকর্তার স্বাক্ষরের একটি ছবি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে ওঠে। নয়াদিল্লির রাইসিনা হিলে অবস্থিত ভারতের সেনাপ্রধানের প্রধান কার্যালয়ের লাউঞ্জের দেওয়ালে এতদিন এ ছবিটি টাঙানো ছিল।
গত ডিসেম্বরে সেনাপ্রধানের দপ্তর সংস্কারের সময় ছবিটি সরিয়ে সেখানে একটি নতুন ছবি টাঙানো হয়। ‘কর্মক্ষেত্র’ নামের হাতে আঁকা সেই পেইন্টিংটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি মাঠে এগিয়ে যাচ্ছে ভারতের সামরিক বাহিনীর সাঁজোয়া যান, ট্যাংক এবং হেলিকপ্টার, আর তাদের পেছনে রথে উপবিষ্ট অবস্থায় সেই সেনাদের নির্দেশ দিচ্ছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবতা শ্রী কৃষ্ণ। এছাড়াও রয়েছেন প্রাচীন ভারতের দার্শনিক চাণক্য এবং ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত চরিত্র গরুঢ়, যিনি ‘পাখিদের রাজা’ নামেও পরিচিত।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেই ছবিটি সরানোর পর স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ভারতের সেনাপ্রধানের দপ্তর থেকেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনই এই ছবি সরিয়ে দেওয়ার প্রধান এবং একমাত্র কারণ।
ভারতের বর্তমান সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী গতকাল মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে ছবি পরিবর্তনের ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের যুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাফল্যের প্রধান রূপকার ছিলেন ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ। ফিল্ড মার্শালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনার্থে সেই ছবিটি মানকেশ কনভেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। ছবিটি বর্তমানে মানেকশ কনভেনশন সেন্টারের লাউঞ্জের দেওয়ালে রয়েছে।”
নতুন ছবিটি সম্পর্কে ভারতের সেনাপ্রধান বলেন, “নতুন এই ছবিটি এঁকেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৮ নম্বর মাদ্রাজ রেজিমেন্টের সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল থমাস জ্যাকব। ভারতের ইতিহাসের ৩টি অধ্যায় রয়েছে— প্রাচীন যুগ, মুঘল যুগ এবং আধুনিক যুগ।”
“নতুন এ ছবিটি একটি প্রতীকী ছবি। এর মাধ্যমে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে ভারতের সেনাবাহিনী একদিকে যেমন ধর্ম ও জাতির মূল্যবোধ-ঐতিহ্যের রক্ষক, তেমনি অন্যদিকে একটি অগ্রসর সমন্বিত বাহিনী হিসেবে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতিফলনকারী।”
সূত্র : এনডিটিভি